ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দর কার্যক্রমে হঠাৎ এই স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে আগুনের সূত্রপাত হয়। কার্গো ভিলেজের উত্তরাংশে, ৮ নম্বর গেট সংলগ্ন আমদানি পণ্য রাখার স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ভবনটি ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনের ভেতর থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া ও আগুনের শিখা বের হতে দেখা যায়, যা আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পাশাপাশি আরও ৬টি ইউনিটকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। অতিরিক্ত সহায়তার জন্য দুটি প্লাটুন বিজিবিও অগ্নি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশ নেয়।
কার্গো ভিলেজ ভবন থেকে লাগাতার ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে, আর বাইরে জড়ো হয়েছে বহু কৌতূহলী মানুষ। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়, যাতে উদ্ধার কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলতে পারে।
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ অবস্থিত পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে। এই স্থানটি মূলত আমদানিকৃত পণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আগুন লাগার পরই কর্মীদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একটি এভিয়েশন কোম্পানির গাড়িচালক জানান, আগুন লাগার মুহূর্তে তিনি ৮ নম্বর গেটের কাছেই অবস্থান করছিলেন। দ্রুত গাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার পর তিনি দেখেন, কার্গো ভবনের ভেতর থেকে কর্মচারীদের দ্রুত বের করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, আগুন প্রথমে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের ৩ নম্বর গেটের পাশে দেখা যায়। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। যদিও আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি, ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা গুদামে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ভবনে প্রবেশ করে আগুনের উৎস শনাক্ত করতে কিছুটা সময় লাগছে। তারা জানিয়েছেন, আগুন যাতে বিমানবন্দরের অন্যান্য অংশে না ছড়ায়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে বিমানবন্দর এলাকার যান চলাচলও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়, যাতে উদ্ধার যানবাহন সহজে চলাচল করতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ যাত্রীদের বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে আমদানি কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তারা যাত্রী ও সাধারণ জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।



