বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড় এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ, যা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই ফোনালাপে দুই নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই আলাপের ফলাফল ইতিবাচক এবং এতে “বড় ধরনের অগ্রগতি” হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আসন্ন সময়ে তিনি পুতিনের সঙ্গে সামনাসামনি বৈঠকে বসবেন, যার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে। তবে বৈঠকের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান নিয়েই মূলত আলোচনা হবে এই বৈঠকে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধকে তিনি ‘অগৌরবজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং এই সংঘাতের অবসানে সম্ভাব্য উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, আগামী শুক্রবারই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করবেন। আর তার একদিন আগেই ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা নিঃসন্দেহে নতুন কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক পুতিনের সঙ্গে। এর আগে গত আগস্টে আলাস্কায় দুই নেতার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সেই সময় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ ট্রাম্প লিখেছেন, “আজকের ফোনালাপ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ শান্তি প্রচেষ্টায় বড় ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে একটি ‘প্রাথমিক বৈঠক’ করবেন, যেখানে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তবে বৈঠকের স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এদিকে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুই নেতার মধ্যে “খোলামেলা ও আস্থাপূর্ণ” আলোচনা হয়েছে এবং শিগগিরই তাদের বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি শুরু হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত তার কূটনৈতিক কৌশলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের প্রতি তার হতাশা প্রকাশ পেলেও, এই নতুন পদক্ষেপ ইঙ্গিত করছে যে, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথেই এগোচ্ছেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক মহল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এই বৈঠকের প্রস্তুতি। ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। সবাই এখন অপেক্ষা করছে—বুদাপেস্টে এই বৈঠক সত্যিই কি যুদ্ধের অবসানে কোনো নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে?



