লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি কর্তৃপক্ষ অভিবাসন অভিযানের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তা দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। কাউন্টি বোর্ড অফ সুপারভাইজরসের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এমন ভাড়াটেদের জন্য ভাড়া সহায়তা প্রদানের পথ খুলে গেছে, যারা সাম্প্রতিক ফেডারেল অভিযানের প্রভাবে সময়মতো ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন।
গত গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু হওয়া অভিবাসনবিরোধী অভিযান ইতিমধ্যে স্থানীয় অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে অনেকেই নিরাপত্তা উদ্বেগে বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। অভিযানে ফেডারেল কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বহু অভিবাসীকে আটক করেছেন—বাড়ি, কর্মস্থল, গাড়ি ধোয়ার স্থান, বাসস্টপ ও কৃষিখেতসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে। এমনকি কিছু মার্কিন নাগরিককেও ভুলবশত আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে রাজ্য থেকে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া সম্ভব হবে, যা আইনগত সহায়তা ও সামাজিক সেবা প্রদানে ব্যয় করা হবে। কাউন্টির সুপারভাইজরদের দপ্তর জানিয়েছে, ভাড়া সহায়তার আবেদন করার জন্য অনলাইন পোর্টাল চালু করা হবে আগামী দুই মাসের মধ্যে। যদিও এটি সরাসরি উচ্ছেদ স্থগিতাদেশের (eviction moratorium) সিদ্ধান্ত নয়, তবে এটি সেই দিকের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
ভূমিমালিকদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, কোভিড–১৯ মহামারির সময়ের মতো আবারও তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। মহামারির সময় দীর্ঘদিন ভাড়া বৃদ্ধি ও উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক মালিকের কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল।
সুপারভাইজরদের ৫ সদস্যের বোর্ডে ৪–১ ভোটে এই প্রস্তাব পাস হয়। একমাত্র বিরোধিতা করেন একজন সুপারভাইজর, যিনি মনে করেন এই পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার পর্যায়ে পড়ে না এবং এটি ভূমিমালিকদের জন্য অন্যায্য হতে পারে।
বোর্ডের দুই সদস্য মন্তব্য করেন, অভিবাসন অভিযান স্থানীয় পরিবার ও ব্যবসাকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আগস্টের শেষ সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় ৫,০০০–এরও বেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাসিন্দাই বিদেশে জন্ম নেওয়া হওয়ায়, অভিযানের ভয় তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। নিরাপত্তা আশঙ্কায় জুলাই মাসের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও গ্রীষ্মকালীন সিনেমা নাইটের মতো অনুষ্ঠান অনেক জায়গায় বাতিল করা হয়েছে।
জুন মাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চল অভিবাসনবিরোধী কঠোর কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এতে বিক্ষোভ, ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন মোতায়েনের ঘটনাও ঘটে, যা এক মাসেরও বেশি সময় স্থায়ী ছিল।
একজন সুপারভাইজর বলেন, “আমাদের অনেক নাগরিক এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। আমার অফিসে প্রতিদিন ফোন আসছে—পরিবারের সদস্য কেউ কর্মস্থল থেকে ফিরছেন না, কেউ জানেন না তিনি কোথায় আছেন বা অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে গেছে কিনা। অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব, কারণ তাদের উপার্জনকারীকে হারিয়েছে তারা।”
বোর্ডের ভোটের আগে একাধিক ব্যক্তি প্রকাশ্যে মন্তব্যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাদের মতে, এটি যদি উচ্ছেদ স্থগিতাদেশে রূপ নেয়, তাহলে তা হবে ভূমিমালিকদের জন্য আরেকটি ধাক্কা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের অ্যাপার্টমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জানান, কোভিড–১৯ সময়ের স্থগিতাদেশে ভূমিমালিকরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন, তা থেকে এখনও তারা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমরা ভাড়াটেদের দুরবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে অভিবাসন অভিযানকে অজুহাত করে যদি আবারও ভাড়া প্রদানে ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সমাজে সাশ্রয়ী বাসস্থানের সংকট আরও বাড়বে।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জরুরি অবস্থা ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক ও আইনি সহায়তা দেওয়া, যাতে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। তবে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তা নির্ভর করবে পরবর্তী নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর।



