Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশসুনামগঞ্জে বালু উত্তোলন নিয়ে বিতর্ক: মামলায় আন্দোলনকারীদের নামও যুক্ত

সুনামগঞ্জে বালু উত্তোলন নিয়ে বিতর্ক: মামলায় আন্দোলনকারীদের নামও যুক্ত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী ঘিরে আবারও দেখা দিয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ। নদী পাড় কেটে বালু লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন চলছে মামলা, অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের ঝড়। তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো—এই মামলায় আসামির তালিকায় উঠে এসেছে সেইসব মানুষের নামও, যারা এতদিন এই বালু লুটের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন।

স্থানীয় লাউড়েরগড় গ্রামের এক তরুণ আলোকচিত্রী ঢাকায় থাকেন, কিন্তু ভাইয়ের বিয়ের জন্য বাড়িতে ফেরেন কয়েকদিনের জন্য। এসময় নদীতে বালু লুটের দৃশ্য দেখে তিনি ভিডিও ধারণ করেন ও ছবি তুলেন। পরে সেগুলো গণমাধ্যমে পাঠালে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু অবাক করার বিষয়—পরিবেশ অধিদপ্তরের করা মামলার আসামির তালিকায় তাঁর নামও যুক্ত হয়েছে।

গত দুই দিনে তাহিরপুর থানায় অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, আরেকটি করেছেন এক ইজারাদার। দুই মামলায় মোট ৮৮ জনের নাম রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৫০ জন অজ্ঞাত আসামি। অভিযোগ অনুযায়ী, ৬ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত লাউড়েরগড় এলাকায় নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় যাদুকাটা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামও এসেছে বলে জানা যায়। এই মামলায় মোট ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে রাখা হয়েছে।

আসামির তালিকায় নাম আসা আলোকচিত্রী বলেন, তিনি তো বালু লুটের বিরোধিতাই করেছেন, এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতাও করেছেন। অথচ এখন তাকেই আসামি করা হয়েছে—যা তাঁর কাছে বিস্ময়কর।

অন্যদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাই করেই তাঁরা তালিকা তৈরি করেছেন। কোনো নাম নিয়ে যদি বিতর্ক ওঠে, তবে তা পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে।

এর একদিন আগে ইজারাদারের এক আত্মীয় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে ৫১ জনের নামসহ আরও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই মামলায় আন্দোলনকারী ও প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য করে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অথচ যারা আসল বালু লুটে যুক্ত ছিল, তাদের অনেকের নাম তালিকায় নেই।

ঘাগটিয়া গ্রামের এক পরিবেশ কর্মী দীর্ঘদিন ধরে এই নদী রক্ষায় আন্দোলন করে আসছেন। তিনি জানান, তাঁর ভাইসহ আন্দোলনে যুক্ত কয়েকজনকেও এবার আসামি করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা জানি কারা বালু লুট করে। ভয় দেখিয়ে বা মামলা দিয়ে আমাদের চুপ করানো যাবে না।”

অন্যদিকে ইজারাদারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের মামলায় কেবল ঘটনাস্থলে জড়িতদেরই আসামি করা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের টার্গেট করা হয়নি।

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের সংগঠন ও নদী–হাওর রক্ষা আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেছেন, শুধুমাত্র মামলা করলেই বালু লুট বন্ধ হবে না। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে মামলায় যেন নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার না হন, সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করা হবে। নির্দোষ কেউ অভিযুক্ত হবেন না, আর দোষীরা বাদ যাবে না—এমন আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, যাদুকাটা নদীর দুটি বালু মহাল এবার প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়েছে। তবে মামলা–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গত পাঁচ মাস বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। চলতি মাস থেকেই আবার শুরু হয়েছে বালু উত্তোলন কার্যক্রম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments