ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সহায়তা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাঁর মিত্রদের প্রতি নতুন করে আহ্বান জানিয়েছেন আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আগে দেওয়া এই আহ্বান এখন ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাই ও আগস্টে ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন, “আপনি তখনই প্রকৃত শান্তিতে থাকতে পারবেন, যখন আপনার শক্তি ও প্রস্তুতি শত্রুপক্ষের শ্রদ্ধা আদায় করতে সক্ষম হবে। শুধু কথা বা হুমকি দিয়ে নয়, বরং দৃঢ় সামরিক সক্ষমতার মাধ্যমেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত ন্যাটোর অধীনে থাকা ইউক্রেন সহায়তা কর্মসূচি—পিইউআরএল—এ আরও অর্থায়ন বাড়ানো। এই কর্মসূচির তহবিলের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ক্রয় করে তা ইউক্রেনের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, “আমরা চাই আরও বেশি দেশ এই তহবিলে অবদান রাখুক, যাতে ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ বাড়ানো যায়। যুদ্ধের অবসান শান্তিপূর্ণভাবে ঘটাতে হলে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোই এখন সবচেয়ে কার্যকর পথ।”
অন্যদিকে, ন্যাটোর মহাসচিবও ইউক্রেনকে সহায়তা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পিইউআরএল কর্মসূচির মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চাওয়া ছিল আরও বড় অঙ্কের—অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি।
সাম্প্রতিক ঘোষণায় সুইডেন, এস্তোনিয়া এবং ফিনল্যান্ড ইউক্রেনের অস্ত্র তহবিলে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে সহযোগিতা কমানোর কারণে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির মতো দেশগুলো সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, আর সামনে আরেকটি কঠিন শীত আসায় সামরিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে।
এদিকে, জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকনোমি সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সহায়তা আগের ছয় মাসের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কমে গেছে। এই তথ্য পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং অনেককেই ভাবাচ্ছে—ইউক্রেনের প্রতিরোধ সক্ষমতা বজায় রাখতে এখনই হয়তো আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
ফলে, ন্যাটো মিত্রদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বান কেবল একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে টিকে থাকার সংগ্রামে এটি হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। পশ্চিমা দেশগুলো যদি এখনই সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা না নেয়, তবে আসন্ন শীতকাল ইউক্রেনের জন্য আরও কঠিন হতে পারে—এমন আশঙ্কাই এখন সর্বত্র শোনা যাচ্ছে।



