যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যদি ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস বর্তমান শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে, তবে তিনি ইসরায়েলকে আবারও গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দিতে পারেন। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত এক ফোনালাপে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি বললেই ইসরায়েলি সেনারা আবার রাস্তায় নামবে।”
প্রেসিডেন্ট জানান, হামাসের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার দ্রুত সমাধান আসবে বলেই তিনি আশা করছেন।
এর আগে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানায়, শান্তিচুক্তির আওতায় জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না হামাস। এতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতিসংঘের কাছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে বিলম্ব বা সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। কারণ, হামাস এখন পর্যন্ত খুব অল্পসংখ্যক মৃত জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে। অন্যদিকে হামাস দাবি করছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় জিম্মিদের মরদেহ খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যদিও পরিস্থিতি জটিল, এখনো পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে করা শান্তিচুক্তি কার্যকর রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার চতুর্থ ধারায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল যখন প্রকাশ্যে চুক্তি মেনে নেবে, তখন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি—জীবিত ও মৃত—ফেরত পাঠানো হবে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং হামাস আটটি মরদেহ হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে চারটি মরদেহ ফেরত এসেছে গত মঙ্গলবার রাতে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ফেরত আসা মরদেহগুলোর একটি ইসরায়েলি জিম্মির নয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এক সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যার মধ্যেই আরও কয়েকটি মরদেহ ফেরত পাওয়া যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, জীবিত জিম্মিদের উদ্ধার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর পরামর্শকদ্বয়ও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না যে হামাস সব মরদেহ না দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করছে। বরং মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর সহায়তায় হামাস নিশ্চিত করেছে যে অবশিষ্ট মরদেহ উদ্ধার ও ফেরত দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রও গোয়েন্দা সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে এই উদ্ধার কার্যক্রমে।
তবে গাজায় পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। জিম্মি ও বন্দী বিনিময়ের পর হামাস এবং অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহিংস সংঘাত শুরু হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হামাস প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট পূর্বেই সতর্ক করেছিলেন—হামাস যদি অস্ত্র ত্যাগ না করে, তবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের নিরস্ত্র করা হবে। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে হামাস গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না, এলাকা থাকবে সামরিকীকরণমুক্ত, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। তবে মার্কিন প্রশাসন স্বীকার করেছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও কাজ বাকি আছে, আর জিম্মি-বন্দী বিনিময় এই দীর্ঘ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মাত্র।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমরা জানতে পারব হামাস কি সত্যিই নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে কিনা।”
শান্তি পরিকল্পনার ষষ্ঠ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, সব জিম্মি ফেরত পাওয়ার পর হামাসের যে সদস্যরা অস্ত্র ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেবে, তাঁদের ক্ষমা করা হবে। আর যারা গাজা ত্যাগ করতে চাইবে, তাদের জন্য নিরাপদ পথ নিশ্চিত করা হবে।
প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করা হলে, হামাস যদি অস্ত্র পরিত্যাগে অস্বীকৃতি জানায় তবে কী হবে, তিনি বলেন, “আমি ভাবছি। যখন আমি বলব, ইসরায়েল দ্রুতই রাস্তায় ফিরবে।”
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও সরকারের কিছু অংশ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু তিনি নিজে হস্তক্ষেপ করে তা ঠেকিয়েছেন। যদিও দুই দেশের নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে বিতর্ক হয়েছে, তবুও তিনি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ব্যাপারে আশাবাদী।
তার মতে, “এখন এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ৫৯টি দেশ যুক্ত রয়েছে। এত বড় পরিসরে সহযোগিতা এর আগে দেখা যায়নি। অনেকেই আব্রাহাম চুক্তির অংশ হতে চায়। ইরান এখন আর বড় কোনো সমস্যা নয়।”



