দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বুধবার এক বক্তব্যে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদকবাহী নৌকার অজুহাতে অন্তত পাঁচটি অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনাগুলোকে “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প জানান, ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মাদক চক্রের কার্যক্রম দমন করতে তাঁদের সামরিক বাহিনী স্থলভাগেও অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। তিনি দাবি করেন, ভেনেজুয়েলা তাদের কারাগার খালি করে বন্দিদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে এবং দেশটি থেকে বিপুল পরিমাণে মাদক পাচার হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই অভিযান অপরিহার্য।
এর আগে বিতর্কিত নির্বাচনের পর ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক পদক্ষেপে কারাকাসে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় জনগণ আশঙ্কা করছে, শিগগিরই দেশটিতে বড় ধরনের সংঘাত শুরু হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুমোদনের ফলে সিআইএ এখন একতরফাভাবে বা মার্কিন সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলায় গোপন মিশন পরিচালনা করতে পারবে। যদিও গোয়েন্দা সংস্থাটি এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে সিআইএ-র সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে।
বুধবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দুটি কারণে আমি অনুমতি দিয়েছি। প্রথমত, তারা তাদের কারাগারগুলো খালি করে বন্দিদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক আমাদের দেশে ঢুকছে। আমরা শুধু সমুদ্রপথ নয়, স্থলপথেও তাদের থামাব।”
তবে সিআইএর লক্ষ্য মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা কি না, সে বিষয়ে ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেননি। যদিও এর আগে যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিলে পাঁচ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল।
মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে এক মার্কিন হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন, “আমাদের গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছে, ঐ নৌকাটি মাদক পাচারে জড়িত ছিল।” কিন্তু নিহতদের পরিচয় বা সংগঠনের নাম মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ করেননি।
রাতে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে সতর্ক বার্তা দেন। তিনি বলেন, “সরকার পরিবর্তনের নামে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়ার মতো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি চাই না। সিআইএ নিয়ন্ত্রিত অভ্যুত্থানকে না বলুন।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, “যুদ্ধ নয়, শান্তিকে বেছে নিন।”
এরপর মাদুরো রাজধানী কারাকাসের উপকণ্ঠে এবং পার্শ্ববর্তী মিরান্দা প্রদেশে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন।
বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি জানান, তেলসমৃদ্ধ দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই গোপন অভিযান কি কেবল মাদকবিরোধী যুদ্ধ, নাকি এর আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও লুকিয়ে আছে।



