যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দেশীয় সন্ত্রাসবাদের আর্থিক নেটওয়ার্ক শনাক্ত ও ধ্বংস করার এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নেমেছে। দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অলাভজনক সংস্থা (nonprofit organization) কীভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগাচ্ছে—সেই উৎসগুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে জোরেশোরে।
অর্থমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন গঠন ও প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে, তবে এসব কর্মকাণ্ড অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। “সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা ঘৃণার রাজনীতি ও সহিংস মনোভাবের উত্থান দেখেছি, যা অনেক ক্ষেত্রেই অলাভজনক সংস্থাগুলোর অর্থায়নে বেড়ে উঠছে। এই ধারা এখনই থামাতে হবে,” তিনি মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ইতোমধ্যেই একটি তালিকা প্রস্তুত করছে, যেখানে সম্ভাব্য আর্থিক নেটওয়ার্কগুলোর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি হলেও এটিকে “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন” হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, এখনো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যায়নি কত অংশ অর্থায়ন বিদেশ থেকে আসছে আর কতটা স্থানীয় উৎস থেকে—তবে তদন্ত চলছে।
তিনি বলেন, “আমরা একদিকে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, অন্যদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও সুরক্ষিত রাখতে চাই। কিন্তু সহিংসতা বা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের পক্ষে অর্থনৈতিক সমর্থনকে কোনোভাবেই বৈধতা দেওয়া হবে না।”
অক্টোবরের মাঝামাঝি এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে অর্থমন্ত্রী জানান, যেমনভাবে ৯/১১ ঘটনার পর বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের অর্থের উৎস শনাক্তে ট্রেজারি নেতৃত্ব দিয়েছিল, এবারও দেশীয় সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানদাতাদের চিহ্নিত করতে একইভাবে “follow the money” কৌশল প্রয়োগ করা হবে।
এ উদ্যোগের পেছনে রয়েছে প্রেসিডেন্টের একটি নির্দেশনা, যা সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে স্বাক্ষরিত হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, দেশীয় সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত কৌশল হাতে নেওয়া হচ্ছে—যেখানে “তদন্ত, ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং ধ্বংস” — এই তিন ধাপে কাজ করা হবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ট্রেজারি সেক্রেটারিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন সব আর্থিক নেটওয়ার্ক শনাক্ত ও বন্ধ করার, যেগুলো রাজনৈতিক সহিংসতা বা দেশীয় সন্ত্রাসে অর্থ জোগাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে করমুক্ত সংস্থাগুলো যেন কোনোভাবেই এমন কার্যক্রমে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অর্থ না দেয়, তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, নির্দেশনাটিতে আরও বলা হয়েছে, এই সংস্থাগুলোর পুনরাবৃত্ত আচরণ, কার্যপদ্ধতি ও উদ্দেশ্য শনাক্ত করে আগেভাগে রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধের পথ তৈরি করা হবে।
অন্যদিকে, এই নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তারা দাবি করছে, নতুন নীতি রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে এবং “অতিরিক্ত বিস্তৃত ও অস্পষ্ট সংজ্ঞা” ব্যবহার করে অলাভজনক সংস্থা, দাতা ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর সুযোগ তৈরি করছে।
মানবাধিকার সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, “রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক সহিংসতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সমালোচকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। এটি কেবল গণতন্ত্রের জন্য নয়, নাগরিক স্বাধীনতার জন্যও এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত।”
এরই মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্য বিচার বিভাগের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়ে দেশীয় রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎসের তদন্ত দাবি করেছেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে কিছু আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন প্রায় ৮ কোটি ডলার এমন সব সংগঠনে ব্যয় করেছে, যেগুলোর সঙ্গে সহিংস কর্মকাণ্ড বা চরমপন্থার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “যেসব সংগঠন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক সহিংসতা উসকে দেয়, তাদের অর্থায়ন সহ্য করা হবে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন দেশের নিরাপত্তা জোরদার করতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় নতুন বিতর্কও তৈরি করতে পারে। তবুও সরকার বলছে—সহিংসতার উৎসে অর্থের প্রবাহ বন্ধ না করলে গণতন্ত্রের মেরুদণ্ডই দুর্বল হয়ে পড়বে।



