প্রায় সাত বছর পর আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ঘটল এক বড় প্রশাসনিক অচলাবস্থা। নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই কংগ্রেস কোনো বাজেট চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলেই কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম, যার প্রভাব এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে—তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় দিকেই।
গত কয়েক বছর ধরে কংগ্রেস নিজস্ব সময়সীমার মধ্যে বাজেট অনুমোদনের কাজ শেষ করতে পারছে না। তবে এ বছরের আলোচনাটি ছিল আরও বিতর্কিত, বিশেষ করে পূর্ববর্তী প্রশাসনের একক সিদ্ধান্তে বাজেট বরাদ্দ পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাবের কারণে। সেই প্রশাসন চেয়েছিল নীতিগত অগ্রাধিকার অনুযায়ী সরকারি ব্যয়কে নিজেদের পছন্দসই পথে চালিত করতে।
প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা প্রস্তাব করেছেন, কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য বর্তমান ব্যয়ের মাত্রা বজায় রেখে অস্থায়ীভাবে সরকার পরিচালনা করা হোক, যতক্ষণ না পূর্ণাঙ্গ বাজেট চূড়ান্ত হয়। কিন্তু সিনেটে ৫৩ জন রিপাবলিকানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও বাজেট পাসের জন্য অন্তত সাতজন ডেমোক্র্যাটের সমর্থন প্রয়োজন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এমন কোনো বাজেট অনুমোদনে রাজি নন, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাটছাঁট রোধ এবং নির্বাহী শাখার একতরফা ব্যয় সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণে নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত করা হবে না।
কংগ্রেসে কোনো অংশের বাজেটেও যখন সমঝোতা হয়নি, তখনই ১ অক্টোবর থেকে সরকারি সংস্থাগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের বিকল্প পরিকল্পনা কার্যকর হয়। কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যা সামাজিক সেবা খাতসহ শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১০ অক্টোবর প্রশাসন ঘোষণা দেয়, বন্ধের সময়কালে শিক্ষা দপ্তরসহ বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থায় “বৃহৎ সংখ্যক” কর্মী ছাঁটাই করা হবে। এর ফলে সরকারি তহবিলনির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে সরকারি স্কুল ও শিশু উন্নয়ন প্রকল্পগুলো, আর্থিক সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকার বন্ধ ছিল ২০১৮ সালের শেষ ভাগ থেকে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে—যা স্থায়ী হয়েছিল ৩৫ দিন। এবারও পরিস্থিতি অনেকটা সেই দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালে ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল অনুরূপ আরেকটি প্রশাসনিক অচলাবস্থা।
বর্তমানে শিক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষকরা দেশজুড়ে বিদ্যালয়গুলোর ওপর এই বন্ধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছেন। বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলোর অনেকখানি ব্যয় নির্ভর করে ফেডারেল অনুদানের ওপর, তারা ইতিমধ্যে আর্থিক সংকটে পড়তে শুরু করেছে। তহবিল স্থগিত থাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পুষ্টি কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নীতি নির্ধারকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য কংগ্রেসকে দ্রুত বাজেট চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায়, শিক্ষা খাতসহ দেশের মৌলিক সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এ অবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হয়, তবে এর অভিঘাত পড়বে শিক্ষার্থীদের ফলাফল, বিদ্যালয়ের কার্যকারিতা এবং শিক্ষক নিয়োগের ওপরও।
অতীতের অভিজ্ঞতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, সরকার বন্ধের প্রভাব তাৎক্ষণিক নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায়। তাই ফেডারেল বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক গভীর অস্থিরতা তৈরি হতে পারে—যার ভার শেষ পর্যন্ত পড়বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর।



