এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যা ২০০১ সালের পর থেকে সবচেয়ে ব্যস্ত মাস হিসেবে ইতিহাসে লেখা হতে পারে। মঙ্গলবার, মিসৌরি এবং ফ্লোরিডায় একই ঘণ্টার মধ্যে দুটি ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এরপর বুধবার মিসিসিপিতে এবং শুক্রবার অ্যারিজোনায় আরও একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে একজন রাষ্ট্র পুলিশের টহর, একটি কলেজ শিক্ষার্থী এবং একটি চারজনের পরিবারকে হত্যা করা অপরাধী।
মিসৌরির ল্যান্স শক্লে, ৪৮, ২০০৫ সালে একজন রাজ্য পুলিশের সার্জেন্টকে হত্যা করার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। শক্লের অভিযোগ করেছে যে সে নির্দোষ, কিন্তু আদালত তা নিশ্চিত করেছে যে ঘটনার প্রমাণ যথেষ্ট। বর্তমানে তার মামলা নিয়ে DNA পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে, যা আদালত অনুমোদন করেনি। শক্লের মৃত্যুদণ্ড ১৪ অক্টোবর কার্যকর হবে।
ফ্লোরিডার ৭২ বছর বয়সী স্যামুয়েল লি স্মিথার্স, ১৯৯৬ সালে দুই নারীকে হত্যা করার দোষে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি আংশিকভাবে অপরাধ স্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, বৃদ্ধ বয়সে তাকে ফাঁসির সাজা দেওয়া সংবিধানের মানদণ্ড লঙ্ঘন করছে। স্মিথার্সের ফাঁসি একই দিনে ১৪ অক্টোবর হবে।
মিসিসিপির চার্লস রে ক্রফোর্ড, ৫৯, ১৯৯৩ সালে ২০ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে ফাঁসির সাজা কার্যকর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। ক্রফোর্ডের আইনজীবীরা নতুন বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন, কারণ তার প্রাথমিক আদালতের আইনজীবীর আচরণ সংবিধান বিরুদ্ধ। তার মৃত্যুদণ্ড ১৫ অক্টোবর কার্যকর হবে।
অ্যারিজোনার রিচার্ড জারফ, ৫৫, ১৯৯৩ সালে ফিনিক্সের একটি চার সদস্যের পরিবারকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত। তিনি আত্মবিশ্বাসীভাবে বলেছেন যে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কিছুটা শান্তি দেবে। জারফের ফাঁসি ১৭ অক্টোবর নির্ধারিত।
এ মাসে মোট সাতটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ ২০১১ সালের পর সবচেয়ে বেশি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় নীতি এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ বছরের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৩৫ জন অভিযুক্তের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, যা ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে বেশি।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য পরিকল্পিত এই মামলাগুলো মানবাধিকার এবং সংবিধানের দিক থেকে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃদ্ধ এবং মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর করা উচিত নয়। এছাড়াও, DNA পরীক্ষার মতো আধুনিক প্রমাণ যাচাইয়ের সুযোগ না দিলে সত্য নির্ধারণ সম্ভব হয় না।
এই ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর আইনগত, নৈতিক এবং সামাজিক দিক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ফাঁসি কার্যকর করার এই ব্যস্ত মাসটি ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া এবং এটি মৃত্যুদণ্ড প্রক্রিয়ার জটিলতা ও বিতর্ককে আবারো সামনে এনেছে।



