মহাকাশ জয়ের অভিযানে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে তাদের বিশাল রকেট ‘স্টারশিপ’-এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন। কয়েক বছর ধরে একের পর এক ব্যর্থতার মুখে পড়ার পর এ সাফল্য স্পেসএক্সের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের দক্ষিণাঞ্চল থেকে গত সোমবার উড্ডয়ন করা এই স্টারশিপ রকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রকেট হিসেবে পরিচিত। এবার এটি অর্ধেক পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ভারত মহাসাগরে নিরাপদে অবতরণ করেছে। পরীক্ষামূলক এই মিশনটি নাসার আসন্ন চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
স্পেসএক্সের তথ্য অনুযায়ী, এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে স্টারশিপ সফলভাবে তার বুস্টার বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছে পরিকল্পনামাফিক। প্রায় ৬০ মিনিট স্থায়ী এ উড্ডয়নে রকেটটি বহন করেছে আটটি কৃত্রিম স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মডেল।
ফেরার পথে স্টারশিপের বুস্টারটি নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মেক্সিকো উপসাগরে নেমে আসে, আর মূল মহাকাশযানটি অবতরণ করে ভারত মহাসাগরে। যেহেতু এটি ছিল পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন, তাই কোনো অংশ পুনরুদ্ধার করা হয়নি। স্পেসএক্সের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পুরো মিশনটি পরিকল্পনামতো সম্পন্ন হয়েছে, যা ভবিষ্যতের মঙ্গল ও চন্দ্র অভিযানের জন্য আশাব্যঞ্জক এক সূচনা।
এই সাফল্যে স্পেসএক্সের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো লঞ্চ কন্ট্রোল রুমের বাইরে থেকে নিজস্ব রকেটের উড্ডয়ন দেখেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক মাস্ক, যা ছিল এক আবেগঘন মুহূর্ত।
স্টারশিপ রকেটের অন্যতম লক্ষ্য মঙ্গল গ্রহে মানব অভিযান পরিচালনা করা। তবে এর আগে ২০৩০ সালের মধ্যে নাসা নভোচারীদের নিয়ে চাঁদে অবতরণের যে পরিকল্পনা করেছে, সেখানে ব্যবহার করা হবে এই ৪০৩ ফুট দীর্ঘ পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেটটি।
নাসার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সফল পরীক্ষা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কারণ, স্টারশিপের সফল পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে যে, এটি গভীর মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত হচ্ছে।
পূর্ববর্তী ১০ বার ব্যর্থ হওয়ার পর এই সফল উড্ডয়ন স্পেসএক্সের মহাকাশ কর্মসূচিকে এক নতুন গতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য কেবল স্পেসএক্সের নয়, বরং মানব সভ্যতার মহাকাশ অভিযানের ভবিষ্যতের এক আশাব্যঞ্জক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।



