ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ১৩ অক্টোবর, যেখানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিধি এবং মার্কিন ব্যবসায়িক খাতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব এবং ইআরডি সচিবসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অংশ নেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ অর্থনীতি পেয়েছিল। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দৃশ্যমানভাবে উন্নতি লাভ করেছে। রিজার্ভ, বন্দর ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব খাতের পরিস্থিতি বর্তমানে সন্তোষজনক। বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে শক্তিশালী করতে ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য আরও সুসংহত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিনিধিরা আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো ধরনের ডলার সংকট নেই এবং ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক লেনদেন সময়মতো সম্পন্ন হচ্ছে। সব ধরনের পাওনা পরিশোধ নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
এ ছাড়া বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পেয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বৈঠকে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশের প্রতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আগ্রহী।
বৈঠকে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সব মিলিয়ে গোলটেবিল বৈঠকটি বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন গতি দিয়েছে। বৈঠক শেষে অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমে আসবে এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।



