Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকনেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের

নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় তাঁকে ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। জেরুজালেমে দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের প্রতি এমন আহ্বান জানান।

সোমবারের সেই ভাষণে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলেন তিনি। বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমার একটা প্রস্তাব আছে। আপনি কেন তাঁকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন না? সিগার আর শ্যাম্পেইনের মতো বিষয়ে কি এত গুরুত্ব দেওয়া উচিত?’

তাঁর এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন নেতানিয়াহু ইসরায়েলে জালিয়াতি, ঘুষ ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে বিচারাধীন। তবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরই এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে এসেছেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এর একটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়, তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ডলার মূল্যের সিগারেট ও শ্যাম্পেইন উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পরে ২০২০ সালে এসব মামলার বিচার শুরু হয়। কিন্তু গাজা উপত্যকায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতির কারণে বিচারপ্রক্রিয়া বারবার স্থগিত হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের পদ সাধারণত আনুষ্ঠানিক। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়ার সাংবিধানিক ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। এ কারণেই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে সরাসরি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা দেওয়ার পরামর্শ দেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এটি প্রথমবার নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এ ধরনের আহ্বান জানালেন। এর আগেও গত জুনে তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেন, এসব বিচারমূলক কার্যক্রম আসলে একজন জনপ্রিয় ডানপন্থী নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বামপন্থীদের রাজনৈতিক কৌশল মাত্র।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলাগুলোর রায় এখনো হয়নি, আর কবে হবে, সেটাও অনিশ্চিত। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় চলা সংঘাত, নতুন করে শুরু হওয়া আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বিচারপ্রক্রিয়ার গতি আরও মন্থর করে তুলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক এই আহ্বান ইসরায়েলি রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। কারণ, একটি বিচারাধীন মামলায় বিদেশি নেতার প্রকাশ্য মন্তব্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি, নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন ও বিরোধিতার মধ্যকার রাজনৈতিক বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য একদিকে নেতানিয়াহুর জন্য ইতিবাচক হলেও, এটি বিচারব্যবস্থার ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ তৈরি করতে পারে।

সব মিলিয়ে, নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বান নিয়ে ইসরায়েলি সমাজে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে—কেউ বলছেন এটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ, আবার কেউ দেখছেন একে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ হিসেবে। তবে একথা স্পষ্ট, দীর্ঘদিনের এই মামলার ভবিষ্যৎ এখন আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments