বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনকাল প্রায় প্রায় ২০ বছর দীর্ঘ হয়েছে ১৯৫০ সালের তুলনায়, সাম্প্রতিক গবেষণা প্রকাশ করেছে। গবেষণায় ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, এই সময়ে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে এখনও বৈষম্য বিদ্যমান এবং কিশোর ও যুবকদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া একটি “উদীয়মান সংকট” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
২০২৩ সালে মহিলাদের গড় আয়ু ছিল ৭৬.৩ বছর এবং পুরুষদের ৭১.৫ বছর। এটি কোভিড মহামারির আগে যে স্তরে ছিল, সেখানে ফিরে এসেছে। কোভিড-১৯ ২০২১ সালে মৃত্যুর প্রধান কারণ থাকলেও, ২০২৩ সালে এটি ২০তম স্থানে নেমে এসেছে। এই সময়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক আবারও বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগ থেকে মৃত্যুর হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, হাম, ডায়রিয়ার রোগ এবং টিউবারকুলোসিস থেকে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বর্তমান সময়ে অ-সংক্রামক রোগ (Non-communicable diseases) এখন বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর এবং রোগের দুই-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। যদিও হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মৃত্যুহার ১৯৯০ সালের পর কমেছে, তবে ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ এবং আলঝেইমার রোগের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বের বৃদ্ধ বয়সী জনগণ এবং পরিবর্তনশীল ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরগুলো নতুন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের সূচনা করেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় অর্ধেক রোগ ও মৃত্যুর কারণ প্রতিরোধযোগ্য এবং এগুলি বিভিন্ন পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত। উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা এমন ১০টি প্রধান ঝুঁকির মধ্যে আছে। ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উচ্চ শারীরিক ওজনের কারণে রোগের বোঝা ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগের বোঝা ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিবেশগত কারণ যেমন বায়ুদূষণ ও সীসার সংস্পর্শ এবং নবজাতক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলোও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যও বিশ্বজনীন মৃত্যুহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের ফলে।
যদিও বিশ্বজনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষ বার্ধক্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তবু কিছু অঞ্চলে শিশু ও যুবকদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়েছে। বিশেষত ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে উচ্চ আয় সম্পন্ন উত্তর আমেরিকায় মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধান কারণগুলো হলো আত্মহত্যা, ড্রাগ ওভারডোজ এবং অতিরিক্ত মদ্যপান।
৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়েছে পূর্ব ইউরোপ, উচ্চ আয় সম্পন্ন উত্তর আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। এছাড়াও সাব-সাহারা আফ্রিকার কিশোর ও যুবকদের মধ্যে সংক্রামক রোগ এবং দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আয়রনের অভাব প্রধান ঝুঁকি, এর পরে আসে নিরাপদ পানীয় জল, স্যানিটেশন ও পুষ্টিহীনতা। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রধান ঝুঁকি হলো অনিরাপদ যৌনচর্চা এবং পেশাগত দুর্ঘটনা, এরপর আসে উচ্চ ওজন, উচ্চ সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং ধূমপান।
জীবনকাল অঞ্চলের ওপর ভিন্নতা প্রদর্শন করে। উচ্চ আয় সম্পন্ন অঞ্চলে গড় জীবনকাল প্রায় ৮৩ বছর, যেখানে সাব-সাহারা আফ্রিকায় তা মাত্র ৬২ বছর। গবেষকরা বলছেন, কিশোর ও যুবকদের স্বাস্থ্য প্রাধান্য বাড়াতে নীতিনির্ধারকদের তৎপর হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয় সম্পন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্য বৈষম্য দূর করার দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সাহায্যের ক্ষতির কারণে ঝুঁকিতে আছে। এই দেশগুলো জীবন রক্ষা করার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের জন্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য তহবিলে নির্ভরশীল। যদি তা না থাকে, তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবধান আরও বাড়বে।



