উত্তর আমেরিকার মুসলিম সমাজে ইসলামিক জ্ঞানচর্চার প্রসারে নতুন উদ্যোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে “কুরআন একাডেমি ফর ইয়াং স্কলার্স” (কাফিস)। পবিত্র কোরআনের আলোকে জীবন গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করা উত্তর আমেরিকার অন্যতম সংগঠন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা) এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। সংগঠনটি মনে করছে, উত্তর আমেরিকায় মুসলিম কমিউনিটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষা এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মুসলমানরা এখনো পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম সম্প্রদায়ে ইসলামিক স্কলারের অভাব প্রকট। এই অভাব পূরণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামিক মূল্যবোধে শিক্ষিত করতে মুনা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকার জামাইকায় (১৬৬-১৫, ৮৯ এভিনিউ) একাডেমির জন্য একটি ভবনসহ বিশাল পরিসরের জমি ক্রয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পুরোনো স্থাপনা ভেঙে সেখানে একটি আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। একাডেমির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যারা অনুদান বা কর্জে হাসানার মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সম্মানে গত ৪ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় জামাইকায় কাফিস ভবনে আয়োজন করা হয় “ডোনার অ্যাপ্রিসিয়েশন ডিনার”।
অনুষ্ঠানে একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় স্লাইড শো’র মাধ্যমে। কাফিসের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মুনার সাবেক জাতীয় সভাপতি তাঁর বক্তব্যে একাডেমির মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, উত্তর আমেরিকার তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের আলোয় গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে ইসলামিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা না গেলে আগামী প্রজন্ম মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।”
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রবাসে ইসলামিক শিক্ষা বিস্তারে কাফিসের মতো একটি আধুনিক একাডেমির প্রতিষ্ঠা মুসলিম সমাজের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাঁরা সবাই একাডেমির উন্নয়নে অব্যাহত সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামী সংগীতের মাধ্যমে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিচালনায় ছিলেন কাফিস নিউইয়র্ক জোনের এক কর্মকর্তা। কোরআন তেলাওয়াত করেন স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম এবং ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন তরুণ শিল্পী আরাফাত রহমান।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এ সময় এক নারী তাঁর ২০ হাজার ডলারের কর্জে হাসানা পুরোপুরি অনুদান হিসেবে ঘোষণা দেন। আরেক নারী নিজের সোনার গহনা দান করেন একাডেমির তহবিলে। অনেকেই তাৎক্ষণিক অনুদান দেন এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
উত্তর আমেরিকার মুসলিম কমিউনিটিতে ইসলামিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে কাফিসের এই পদক্ষেপকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। একাডেমিটি বাস্তবায়িত হলে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিক শিক্ষা ও নেতৃত্বগুণ বিকাশে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।



