Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যট্রাম্প প্রশাসনের H-1B ভিসা পরিবর্তন: বড় প্রযুক্তি খাতের জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্প প্রশাসনের H-1B ভিসা পরিবর্তন: বড় প্রযুক্তি খাতের জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন, যা দেশটির প্রযুক্তি খাতের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, H-1B ভিসার জন্য নতুন আবেদনকারীদেরকে ১ লাখ ডলারের ফি দিতে হবে। বর্তমান সময়ে এই ফি কয়েক হাজার ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাই এই পরিবর্তন সরাসরি ভিসা প্রোগ্রামের খরচ ও প্রক্রিয়ায় বড় ধাক্কা দিতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের ফলে বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রথা পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। মার্কিন বাণিজ্য সচিবও মন্তব্য করেছেন, ভিসার অতিরিক্ত খরচ এবং কর্মচারীর বেতন একত্রে বিবেচনা করলে এটি আর লাভজনক হবে না। ফলে, প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো বিদেশি দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার চেয়ে দেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় মনোযোগ দেবেন।

H-1B ভিসা প্রোগ্রাম ১৯৯০ সালের ইমিগ্রেশন অ্যাক্টের অধীনে চালু করা হয়। এটি মার্কিন নিয়োগকর্তাদেরকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদেশি পেশাজীবীদের নিয়োগের সুযোগ দেয়, যারা বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন। ভিসা সাধারণত তিন বছরের জন্য বৈধ থাকে এবং সর্বাধিক ছয় বছর পর্যন্ত প্রসারিত করা যেতে পারে। বছরে অনুমোদিত ভিসার সংখ্যা ৬৫,০০০ এবং উন্নত ডিগ্রিধারীদের জন্য অতিরিক্ত ২০,০০০ ভিসা বরাদ্দ রয়েছে।

এই প্রোগ্রাম মূলত প্রযুক্তি খাতে বিদেশি দক্ষ কর্মী আনার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে মার্কিন বাজারে পর্যাপ্ত যোগ্য শ্রমিক পাওয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আমাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল এবং গুগল ২০২৫ অর্থবছরে H-1B ভিসাধারীদের মধ্যে শীর্ষ নিয়োগকর্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত। এরই মধ্যে, H-1B ভিসা পেয়েছিলেন এমন বিখ্যাত উদ্যোক্তারা যাদের উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক সাফল্য প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন দিগন্ত খুলেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, উচ্চ বেতনের বিদেশি কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভিসা বণ্টন করার প্রস্তাবটি দেশীয় প্রতিভাকে উৎসাহিত করবে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াই এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত, বিদেশি কর্মী নিয়ে স্থানীয় কাজের সুযোগ কমানো নয়।

তবে সমালোচকেরা মনে করেন, এই ধরনের ফি বৃদ্ধির ফলে উদ্ভাবনের ধারা থমকে যেতে পারে। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাহরণ টেনে দেখা যায়, সীমিত বাজেটে শুরু করা অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি আজ বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছেছে। এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

একটি বড় প্রশ্ন হলো, নতুন নিয়ম প্রয়োগ করলে প্রযুক্তি খাতে কর্মী সংকটের কারণে ব্যবসায়িক অগ্রগতি ধীর হয়ে যেতে পারে। স্টার্টআপ থেকে বড় প্রযুক্তি কোম্পানি পর্যন্ত, সঠিক সময়ে বিদেশি দক্ষ শ্রমিক না থাকলে প্রকল্পের গতি কমতে পারে। অপরদিকে, সস্তা শ্রম বাজারে আসলে স্থানীয় কর্মীদের সুযোগ ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন মৌসুম শেষে বাধ্যতামূলক বিশ্রামের ব্যবস্থা, যুবক কর্মীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা এবং সপ্তাহে ন্যূনতম একদিন ছুটি নিশ্চিত করতে। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ফেডারেশন নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী নিয়মের সময়সীমা বাড়াতে চায়, খেলোয়াড়দের মতো প্রযুক্তি খাতের শ্রমিকদেরও সঠিক বিশ্রাম ও সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।

পরিশেষে বলা যায়, প্রেসিডেন্টের নতুন H-1B ভিসা নীতি বড় প্রযুক্তি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এটি শুধু খরচ বৃদ্ধি নয়, বরং প্রতিভা ও উদ্ভাবনের ধারাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে চলতে বাধ্য করছে। দেশীয় প্রতিভার বিকাশ এবং বিদেশি দক্ষ শ্রমিকের সমন্বয়েই প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যত স্থিতিশীল হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments