যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এক অনুষ্ঠানে জানান, সম্প্রতি শান্তিতে নোবেলজয়ী এক নারী নেতা তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন—তিনি যে সম্মান পেয়েছেন, সেটি আসলে তাঁর (ট্রাম্পের) জন্যই প্রাপ্য। এই ফোনালাপ ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা, বিশেষ করে ট্রাম্পের পুরনো দাবি ও তাঁর সমর্থকদের বক্তব্য নিয়ে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প নিজেকে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি একাধিক সংঘাত ও যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন, এমনকি সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তিও তাঁর উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয়েছে। তাঁর দাবি, এই উদ্যোগগুলোই তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের প্রকৃত দাবিদার করে তোলে।
তবে বাস্তবতা হলো, এই বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার গেছে অন্য এক নেত্রীর হাতে—যিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়েছেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই নেত্রীই ট্রাম্পকে ফোন করে জানিয়েছেন, “আমি এই পুরস্কার আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ আপনি সত্যিই এর যোগ্য।”
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল না দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নোবেল কমিটি এখন শান্তির চেয়ে রাজনীতিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, পুরস্কারের মূল্যায়ন এখন ন্যায্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে করা হচ্ছে।”
মুখপাত্র আরও বলেন, “ট্রাম্প এমন একজন নেতা যিনি যুদ্ধ বন্ধের মাধ্যমে লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছে এক মানবিক হৃদয়, যা আজকের বিশ্বে বিরল। তিনি তাঁর দৃঢ় মনোবল ও কৌশল দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজে নোবেল কমিটিকে সরাসরি সমালোচনা না করলেও জানান, তিনি অন্তত আটটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই অনেক সংকটের সমাধান হয়েছে। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যিনি পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমাকে ফোন করে বলেছেন, এই সম্মান আপনারই প্রাপ্য।”
হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে ট্রাম্প বলেন, “আমি তাঁকে বলিনি, তাহলে আমাকেই দিয়ে দাও! তবে আমি জানি, তিনি চাইলে সত্যিই তা করতেন। কারণ তাঁর কথাগুলো ছিল একদম হৃদয় থেকে আসা।”
ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, নোবেল কমিটির এই বছরের সিদ্ধান্ত মূলত ২০২৪ সালের ঘটনাপ্রবাহের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে। সে সময় তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন, তবু তাঁর মতে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, এর স্বীকৃতি তাঁকে দেওয়া উচিত ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য শুধু ট্রাম্পের আত্মবিশ্বাসই নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অবস্থানও স্পষ্ট করে। কেননা, তিনি আবারও আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ইস্যুকে সামনে এনে নিজেকে বিশ্ব নেতৃত্বের আলোচনায় তুলে ধরতে চাইছেন।
বর্তমানে নোবেল পুরস্কার ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়, তবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা—দুটিই নতুন মাত্রা পেয়েছে। একদিকে, নোবেলজয়ী নেত্রীর সৌজন্যতা; অন্যদিকে, ট্রাম্পের দাবি—এই দুইয়ের মিলনে আবারও বিশ্বমঞ্চে আলোচনায় এসেছে শান্তি ও কূটনীতির বাস্তব চিত্র।



