Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যশিকাগোর নিকটস্থ অভিবাসন দপ্তরে বিক্ষোভ, তিনজন গ্রেপ্তার

শিকাগোর নিকটস্থ অভিবাসন দপ্তরে বিক্ষোভ, তিনজন গ্রেপ্তার

ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ব্রডভিউ এলাকায় অবস্থিত একটি অভিবাসন দপ্তরের সামনে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। ১০ অক্টোবর দুপুরে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের আটক করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে “আইন অমান্য ও কর্তব্যে বাধা প্রদান”–এর অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে এমন সময়ে যখন অভিবাসন নীতিকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। এর এক দিন আগে ফেডারেল আদালত এক আদেশে ব্রডভিউর ওই অভিবাসন দপ্তরের চারপাশে নির্মিত নিরাপত্তা বেড়া অপসারণের নির্দেশ দেন। আদালতের এই রায়ের পরই বৃহস্পতিবার আরেক ফেডারেল বিচারক অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই সিদ্ধান্তটি মূলত “অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ” নামে পরিচিত একটি অভিযানের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল শিকাগো এলাকায় অবৈধ অভিবাসন রোধ করা। তবে প্রশাসন এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

এর আগে, ৭ অক্টোবর ইলিনয়ের উত্তরাঞ্চলীয় আদালতের আরেক বিচারক অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি আদেশ জারি করেন, যেখানে বলা হয় সংস্থা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আইন লঙ্ঘন করেছে। সেই আদেশে সংস্থার এমন কার্যক্রমের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঘোষণা করেছেন যে, শিকাগো ও পোর্টল্যান্ডে নতুন স্থাপনা ক্রয়ের মাধ্যমে সংস্থার কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হবে। তবে স্থানীয় জনগণ ও মানবাধিকারকর্মীরা বিষয়টিকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন।

বিক্ষোভের দিন অভিবাসন দপ্তরের বাইরে ভিড় জমে যায় প্রতিবাদকারীদের। কেউ কেউ সংস্থার নীতির বিরোধিতা করলেও, অন্য একদল সমর্থনে অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হওয়ায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি শুরুতে শান্ত থাকলেও বিকেল গড়াতেই উত্তেজনা ছড়ায়। সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদিও সরাসরি কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি, তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এক নারী বিক্ষোভকারী জানান, “তারা এই বেড়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে চায়, কিন্তু আমরা মানুষ—আমরাও আমাদের কথা বলব।” অন্যদিকে এক সমর্থক ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, “তোমরা গর্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করো।”

ঘটনাস্থলে এক ধর্মীয় সংগঠনের নেতা উপস্থিত হয়ে অভিবাসন দপ্তরটি বন্ধের দাবি জানান। তিনি জানান, “এটি মানবতার বিরুদ্ধে এক প্রাচীর, যা ভেঙে ফেলতে হবে।”

এদিকে, বিক্ষোভের স্থানটিতে এক নারী হলুদ রঙের মুরগির পোশাক পরে ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে তিনি একটি নীল রাবার চিকেন বাজিয়ে হাস্যরস তৈরি করছিলেন। তিনি জানান, “মিডিয়া যেভাবে আমাদের উপস্থাপন করছে, তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছি এবং আহতদের চিকিৎসা সহায়তাও দিচ্ছি।”

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন নীতি নিয়ে আদালত, প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, এই ঘটনাটি তারই প্রতিফলন। আদালতের রায়, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এবং মাঠপর্যায়ের প্রতিক্রিয়ার এই জটিল সম্পর্কই এখন মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাকে নতুন বিতর্কের মুখে ফেলেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments