Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ: শান্তির আলো দেখা দিলেও পথ এখনো কঠিন

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ: শান্তির আলো দেখা দিলেও পথ এখনো কঠিন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি একে বলেছেন “টেকসই ও স্থায়ী শান্তির পথে প্রথম ধাপ”। তবে বাস্তবতা হচ্ছে—এই চুক্তি শুধু সাময়িক বিরতি, মূল কাজ এখনই শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে এটি আশা জাগালেও, দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এখনও বহু বাধা রয়ে গেছে।

চুক্তির ঘোষণার পর ইসরায়েল ও গাজা—দুই পক্ষের মধ্যেই দেখা দিয়েছে এক ধরনের স্বস্তি। অন্তত কিছুদিনের জন্যও হত্যাযজ্ঞের অবসান, বন্দিদের মুক্তি এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহ শুরু হওয়ায় মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাময়িক শান্তি স্থায়ী সমাধানের নিশ্চয়তা নয়। তবুও এটি একটি সুযোগ, যা কাজে লাগানো জরুরি।

এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে। প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, এবং কাতার, মিশর ও তুরস্কের কূটনৈতিক ভূমিকা হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে। এই সহযোগিতার ফলেই সাময়িকভাবে হলেও যুদ্ধবিরতির পথ খুলেছে।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আগেই চাইলে এই সংঘাত বন্ধ করা যেত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে যেসব মানুষ বন্দি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনের বেশি ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এত বিপুল প্রাণহানির পরও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগের অভাব ছিল।

গাজার যুদ্ধ এখন শুধু সীমান্তের লড়াই নয়, বরং উভয় পক্ষের কাছেই এটি টিকে থাকার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। তাই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে—যে কোনো সময় আবারও যুদ্ধ শুরু হতে পারে। আপাতত উভয় পক্ষই মনে করছে, আলোচনাই তাদের জন্য বেশি লাভজনক।

তবে চুক্তির বাস্তবায়নে কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। হামাস অস্ত্র সমর্পণের বিষয়ে অনিচ্ছুক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না, কিন্তু সেখানে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে বহিরাগত তত্ত্বাবধানে—যা অনেকেই “নতুন ধরনের উপনিবেশ” হিসেবে দেখছেন। এতে ভবিষ্যতের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা অনেকটাই অনিশ্চিত।

ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়াতেও দেখা দিয়েছে সীমাবদ্ধতা। বহুদিন ধরে কারাবন্দি জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারগুতিকে মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকেই হতাশ। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিক কৃতিত্ব পেলেও তিনি কতদিন এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে ইউরোপীয় নেতাদের অনেকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি যদি স্থায়ী শান্তিতে রূপ নিতে চায়, তবে সেটি দুই রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতেই হতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ এবং জনমতের প্রভাবেই ইসরায়েল কিছুটা নমনীয় হয়েছে। তবে এখন যদি পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, এই অস্থায়ী সমাধানই চূড়ান্ত শান্তি—তাহলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় ভুল। প্রকৃত স্থায়ী শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন তা ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—মনোযোগ না সরানো। মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতের প্রতিটি পরিণতি এখনো অনিশ্চিত। বিশ্বের মানুষকে সত্য জানাতে মাঠে থাকা সাংবাদিকদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ এই যুদ্ধবিরতি কেবল শুরু, শেষ নয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments