Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যদুর্গা পূজার মণ্ডপে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতীকী প্রতিবাদ

দুর্গা পূজার মণ্ডপে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতীকী প্রতিবাদ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দুর্গা পূজার এক শিল্প-ইনস্টলেশন এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সিংহের পিঠে আসীন দেবী দুর্গা, হাতে দশটি অস্ত্র—কিন্তু এ বছর তাঁর লক্ষ্য প্রচলিত অসুর নয়। প্রতীকীভাবে তিনি আঘাত করছেন এমন এক চেহারার দিকে, যিনি আধুনিক রাজনীতিতে ‘অশুভ শক্তি’র প্রতীক হিসেবে স্থান পেয়েছেন। এই ইনস্টলেশনটি একদিকে যেমন শিল্পের নিদর্শন, তেমনি বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের এক শহরে অনুষ্ঠিত এই দুর্গা পূজা মণ্ডপে প্রদর্শিত শিল্পকর্মে দেবী দুর্গাকে দেখানো হয়েছে এক নতুন রূপে, যেখানে তিনি আধুনিক বিশ্বের শোষণ, অবিচার ও একচেটিয়া ক্ষমতার প্রতীকের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আয়োজক কমিটির এক সদস্য জানান, “দেবী দুর্গা এখানে শুধু ধর্মীয় প্রতীক নন, বরং ন্যায় ও মানবতার রক্ষাকারী শক্তির প্রতিমূর্তি।”

দুর্গা পূজা মূলত শুভ শক্তির অশুভ শক্তির ওপর বিজয়ের প্রতীক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার এই উৎসব শুধুমাত্র ধর্মীয় সীমায় আটকে নেই। এখন এটি সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির মিশ্রণে পরিণত হয়েছে। প্রায় পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবে নানা থিমের মাধ্যমে মানুষ তুলে ধরছে তাদের উদ্বেগ, প্রতিবাদ ও আশা।

গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গা পূজার মণ্ডপগুলোতে নানা সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু উঠে এসেছে। কখনো শরণার্থী সংকট, কখনো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংঘাত, আবার কখনো বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব—সবই ফুটে উঠেছে এই শিল্পে। অতীতেও দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে সীমান্ত বিরোধ—সবকিছুকে শিল্পীরা মণ্ডপের মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক ও প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করেছেন।

একজন স্থানীয় সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক বলেন, “দুর্গা পূজা এখন শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক ধরনের জনআলোচনা। শিল্পীরা মণ্ডপকে ব্যবহার করছেন মানুষের ভাবনা ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে।”

ছয় বছর আগে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। দুই দেশের নেতারা জনসমক্ষে একে অপরের হাত ধরে সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বন্ধুত্বে এসেছে ভাঙন। বাণিজ্যনীতি, শুল্ক আর বৈশ্বিক সংঘাতের প্রশ্নে সেই সম্পর্কের মধ্যে তৈরি হয়েছে দূরত্ব।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে দিল্লির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এমনকি দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সমাজ। ফলে, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বাণিজ্য যুদ্ধের টানাপোড়েন এবার শিল্পের ভাষায় প্রতিফলিত হয়েছে দুর্গা পূজার মণ্ডপে।

আয়োজকদের দাবি, এই প্রতীকী শিল্পকর্মের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নয়; বরং বৈশ্বিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থনৈতিক নিপীড়নের প্রতিবাদ জানানো। তাঁদের মতে, “এটি দেবী দুর্গার সেই চিরন্তন বার্তা—যেখানে ন্যায় অন্যায়ের ওপর জয়লাভ করে।”

প্রায় তিন মাসের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় এই মণ্ডপ। পুরো কাজটি গোপন রাখা হয় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, যাতে দর্শকদের জন্য থাকে চমকের উপাদান। শেষ সাত দিনে তৈরি করা হয় ‘অসুর’-এর প্রতিকৃতি, যা উন্মোচনের পর দর্শকরা ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে।

বাংলার ইতিহাসে প্রতিবাদ ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ নতুন কিছু নয়। ঔপনিবেশিক আমল থেকেই এ অঞ্চল রাজনৈতিক চেতনা ও সাহিত্যিক প্রতিরোধের জন্য বিখ্যাত। এখানকার কবি ও সাহিত্যিকরা যেমন স্বাধীনতার আহ্বান তুলেছিলেন, তেমনি শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদের ভাষাও তৈরি করেছিলেন। সেই ঐতিহ্যই আজও বেঁচে আছে দুর্গা পূজার শিল্পমণ্ডপে।

আধুনিক রাজনীতির প্রতি এই ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া কেবল একটি ধর্মীয় মঞ্চে নয়, বরং মানুষের ভাবনা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রতিফলন। দেবী দুর্গা এখানে প্রতীক হয়ে উঠেছেন সেই শক্তির, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক।

একজন আয়োজক বলেন, “যখন সমাজে অন্যায়, বঞ্চনা বা অবিচার বাড়ে, তখন দেবী দুর্গা সেই প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। এই বছর আমরা সেটিই দেখাতে চেয়েছি—ন্যায় সর্বদা জিতবে, অশুভের পরাজয় হবেই।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments