যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের হার গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে—এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের ঘটনা গত অর্ধশতাব্দীর যেকোনো সময়ের তুলনায় কম।
২০২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে, যা পূর্ববর্তী প্রশাসনের শেষ সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে, মার্কিন বর্ডার পেট্রোল সদস্যরা মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের (Department of Homeland Security) প্রাথমিক তথ্য বলছে, এটি ১৯৭০ সালের পর সর্বনিম্ন সংখ্যা। সে সময় সীমান্ত টহলদল অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে চাওয়া প্রায় ২ লাখ ২ হাজার মানুষকে আটক করেছিল।
একজন অভিবাসন নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, “এই পরিসংখ্যান সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে উভয় রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনের উচিত দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে কাজ করা।”
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই অর্ধেকেরও বেশি আটক অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চলা অর্থবছরের প্রথম ভাগেই এই অভিযানগুলোর বেশিরভাগ পরিচালিত হয়।
আটক হওয়ার সংখ্যাটি মূলত সেইসব ঘটনার প্রতিফলন যেখানে সীমান্ত টহলদল অবৈধভাবে প্রবেশ করতে চাওয়া অভিবাসীদের আটক ও প্রক্রিয়াকরণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই ব্যক্তি একাধিকবার সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেছে।
মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (US Customs and Border Protection) সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে মোট প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বার সীমান্তে অবৈধ প্রবেশের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানকে সীমান্ত সুরক্ষায় প্রশাসনের সফলতার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এখন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা আরও নিরাপদ। অপরিচিত অপরাধী অভিবাসী ও বিপজ্জনক মাদক আর আগের মতো সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অনেকেই ভেবেছিল সীমান্ত সুরক্ষিত করা অসম্ভব—কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ করেছে, পরিবর্তনশীল নেতৃত্বই এর সমাধান।”
নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই একাধিক অভিবাসন-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, আশ্রয় (asylum) আবেদন স্থগিতকরণ, এবং অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
এছাড়া প্রশাসন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির আইন বাতিলেরও উদ্যোগ নিয়েছে। একইসঙ্গে দেশে অবস্থানরত অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানামুখী অভিযান চালানো হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগোসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় শহরে অভিযান পরিচালনা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ফেডারেল কর্মকর্তাদের মতে, এই উদ্যোগগুলোই সীমান্তে অবৈধ প্রবেশের প্রবণতা কমিয়ে আনতে মূল ভূমিকা রেখেছে। তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আইনগত সংস্কার প্রয়োজন—শুধু কঠোরতা নয়, প্রয়োজন মানবিকতা ও কার্যকর নীতিনির্ধারণ।



