Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশবাংলাদেশের ব্যান্ডউইডথ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় সেবা দিতে চায় এক মার্কিন প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের ব্যান্ডউইডথ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় সেবা দিতে চায় এক মার্কিন প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইন্টারনেট সেবা চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে।

গত ১৩ আগস্ট পাঠানো ওই চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশকে তারা “পয়েন্ট অব প্রেজেন্স” বা পপ হিসেবে বিবেচনা করে আশপাশের দেশগুলোয় ইন্টারনেট সেবা দিতে চায়। এজন্য তারা বাণিজ্যিকভাবে “ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি)” এবং “আনফিল্টারড আইপি” ব্যবহারের অনুমোদন চেয়েছে, যাতে করে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে তাদের সেবা চালু রয়েছে, আর ভারত ও নেপালে সেবা চালুর প্রস্তুতি চলছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট সেবা মূলত সাবমেরিন কেবল নির্ভর, যেখানে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ আনা হয় এবং মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা সেই ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে সাধারণ গ্রাহকদের সেবা দেয়। কিন্তু এই মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি স্যাটেলাইট নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার উপগ্রহের মাধ্যমে সিগন্যাল পাঠিয়ে পুরো বিশ্বে দ্রুত ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সক্ষম।

বিটিআরসিকে পাঠানো চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের পপ থেকে সিঙ্গাপুর ও ওমানের পপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চায়, যার প্রতিটি পপ কমপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক পপের সঙ্গে আন্তসংযুক্ত থাকবে। তারা এই সংযোগের মাধ্যমে আনফিল্টারড আইপি ট্রানজিট ব্যবহার করবে, যা বাংলাদেশের স্থানীয় ইন্টারনেট ট্রাফিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এছাড়া তারা বাংলাদেশের আইন, নিরাপত্তা এবং কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলবে বলেও জানিয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই সংযোগের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। দেশের সব ব্যবহারকারী স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও আইপি ট্রানজিট ব্যবস্থার আওতায় থাকবে, ফলে নিরাপত্তা ও কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকবে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের আনফিল্টারড আইপি সংযোগ বাংলাদেশের অনুমোদিত দুই প্রতিষ্ঠান—ফাইবারঅ্যাটহোম এবং সামিট কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে নেওয়া হবে। এই দুই প্রতিষ্ঠানই আইআইজি ও ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) লাইসেন্সধারী।

বিটিআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টিকে ট্রানজিট নয়, বরং ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির সুযোগ হিসেবে দেখছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করছে, যার সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগে কারিগরি দিক ও সরকারি অনুমোদন যাচাই করা হবে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে, যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুটানের মতো দেশগুলো বর্তমানে সিঙ্গাপুর থেকে ব্যান্ডউইডথ নিচ্ছে, যা দূরত্বের কারণে ব্যয়বহুল ও মানহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান তাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। বাংলাদেশের ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করলে তারা উন্নত মানের সেবা কম খরচে পেতে পারে।

বর্তমানে দেশে ওই মার্কিন প্রতিষ্ঠানের চারটি গ্রাউন্ড স্টেশন রয়েছে—দুটি গাজীপুরে, একটি রাজশাহীতে এবং একটি যশোরে।

দেশের ইন্টারনেট খাতের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে দৈনিক ব্যান্ডউইডথ চাহিদা প্রায় ৯ টেরাবাইট, যার মধ্যে প্রায় ৭ টেরাবাইট আসে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এবং বাকিটা ভারত থেকে আইটিসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। তারা মনে করছেন, দেশের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করা সম্ভব হলে তা হবে দেশের জন্য লাভজনক উদ্যোগ। তবে সাবমেরিন কেবল থেকে সরাসরি ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা পর্যাপ্ত কি না, সেটি এখন প্রধান প্রশ্ন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments