মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে ঘটছে এক বড় পরিবর্তন। মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলের দুই আঞ্চলিক ব্যাংক, ফিফথ থার্ড এবং কোমেরিকা, একীভূত হতে যাচ্ছে একটি সব-শেয়ার চুক্তির মাধ্যমে যার মূল্য ধরা হয়েছে ১০.৯ বিলিয়ন ডলার। এই একীভবনের মাধ্যমে তৈরি হবে যুক্তরাষ্ট্রের নবম বৃহত্তম ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, যার প্রভাব বিস্তার ঘটবে দেশজুড়ে বিশেষত মধ্য-পশ্চিমের বাজারে।
২০২৩ সালে ব্যাংকিং খাতে ঘটে যাওয়া অস্থিরতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের পর, আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের ভারসাম্য পুনর্গঠন, আয় বৃদ্ধির নতুন উৎস খোঁজা এবং দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণে মনোযোগী হচ্ছে। এই একীভবন সেই কৌশলগত প্রচেষ্টারই অংশ, যা তাদের বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখবে বলে বিশ্লেষকদের মত।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, তুলনামূলক ছোট ব্যাংকগুলোর জন্য একীভবনই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এটি তাদের আর্থিক স্থিতি দৃঢ় করার পাশাপাশি বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করে দেয়। আরও বলা হয়েছে, সম্ভাব্য হালকা নিয়ন্ত্রক পরিবেশের সুযোগে এই ধরনের আরও একীভবন আগামী দিনে দেখা যেতে পারে।
চুক্তি অনুযায়ী, কোমেরিকার প্রতিটি শেয়ার বিনিময়ে শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন ফিফথ থার্ডের ১.৮৬৬৩টি শেয়ার। ফিফথ থার্ডের ৩ অক্টোবরের বাজারদরের ভিত্তিতে কোমেরিকার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮২.৮৮ ডলার। এই ঘোষণার পর কোমেরিকার শেয়ারমূল্য প্রাক-বাজারে ১২% বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে ফিফথ থার্ডের শেয়ার সামান্য ৩% হ্রাস পায়।
আর্গাস রিসার্চের এক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “রেকর্ড ব্যাংক শেয়ারমূল্য এখন অনেক প্রতিষ্ঠানকে নতুন চুক্তি করতে উৎসাহিত করছে। আজকের এই ঘোষণাটি ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডগুলোর মধ্যে আরও একীভবনের আলোচনাকে ত্বরান্বিত করবে।”
এ বছর S&P 500 ব্যাংক সূচক বেড়েছে প্রায় ২১%, যা মূল সূচক S&P 500-এর ১৪% বৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এই একীভবনের মাধ্যমে ফিফথ থার্ড ব্যাংক এখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত-বর্ধনশীল ২০টি বাজারের মধ্যে ১৭টিতে প্রবেশাধিকার পাবে। ব্যাংকটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, টেক্সাস এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ এইসব অঞ্চলে সম্প্রসারণ ঘটানো হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাংকের অর্ধেকেরও বেশি শাখা এসব এলাকায় থাকবে।
ফিফথ থার্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এই চুক্তিকে প্রতিষ্ঠানটির কৌশলগত মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা দ্রুত-বর্ধনশীল বাজারে আমাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চাই, পাশাপাশি বাণিজ্যিক সক্ষমতাও বাড়াতে চাই।”
বর্তমানে ব্যাংকগুলো সুদের হারের পরিবর্তনের কারণে আয়চাপে পড়ছে। এ অবস্থায় তারা সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পেমেন্ট ও ট্রেজারি সার্ভিসের মতো খাতগুলো থেকে স্থিতিশীল রাজস্ব প্রবাহ তৈরি করতে চাইছে।
একীভবনের পর কোমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যৌথ ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। একই সঙ্গে কোমেরিকার প্রধান ব্যাংকিং কর্মকর্তা ফিফথ থার্ডের সম্পদ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগটির নেতৃত্ব দেবেন।
চুক্তি সম্পন্ন হলে নতুন প্রতিষ্ঠানটির দুটি ১ বিলিয়ন ডলারের পুনরাবৃত্ত রাজস্ব ব্যবসা থাকবে—একটি বাণিজ্যিক পেমেন্টস এবং অন্যটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা।
এই একীভবন ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের শেষে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তখন ফিফথ থার্ডের শেয়ারহোল্ডাররা যৌথ ব্যাংকের প্রায় ৭৩% মালিকানা ধরে রাখবেন।
এই চুক্তি শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, বরং পুরো মার্কিন ব্যাংক খাতের জন্য একটি বড় বার্তা—সংহতি ও পুনর্গঠন ছাড়া ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন।



