যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি স্থবিরতার কারণে দেশটির বিভিন্ন বিমানবন্দর ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারে কর্মীসংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে একাধিক স্থানে বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায় এই সংকট স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে জানা গেছে।
পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি অচলাবস্থার শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু কর্মী অসুস্থতার অজুহাতে কাজে অনুপস্থিত রয়েছেন। যদিও সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও এর প্রভাব পড়ছে বিমান চলাচলে।
লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকার হলিউড বারব্যাঙ্ক বিমানবন্দরে সোমবার রাতের কয়েক ঘণ্টায় কোনো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার উপস্থিত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (FAA) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত এই ঘাটতি বজায় ছিল।
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, এসময় কিছু ফ্লাইটের দায়িত্ব নেয় সান ডিয়েগো টার্মিনাল রাডার অ্যাপ্রোচ কন্ট্রোল, তবে সীমিত হারে। এর ফলে আগমন ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে বিলম্ব ছিল অনিবার্য। যদিও বারব্যাঙ্ক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানবন্দরটি খোলা আছে এবং কার্যক্রম চলছে। যাত্রীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ভ্রমণের আগে তাদের নির্ধারিত এয়ারলাইনের সাথে যোগাযোগ করে বিলম্ব বা বাতিল সংক্রান্ত আপডেট জেনে নেন।
একই দিন নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর এবং ডেনভার ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরেও অনুরূপ কর্মীসংকটের তথ্য পাওয়া গেছে।
বারব্যাঙ্কে কর্মী অনুপস্থিতির নির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও অনুমান করা হচ্ছে, চলমান সরকারি স্থবিরতা এর অন্যতম কারণ। বর্তমানে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকর্মীরা বেতন ছাড়াই কাজ করছেন, যা মনোবলে প্রভাব ফেলছে।
সরকারি বাজেট অনুমোদনের প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ায় দেশজুড়ে সরকারি দপ্তরগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সিনেট সোমবার রাতেও নতুন কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। ফলে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো ইঙ্গিত নেই।
পরিবহন বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “সরকারি তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিতির হার কিছুটা বেড়েছে। এটি সামান্য হলেও বিমান চলাচলে এর প্রভাব পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার নিরাপত্তা। তাই কর্মীসংকট দেখা দিলে বিমান চলাচলের হার সীমিত রাখা হচ্ছে, যাতে নিরাপদভাবে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।”
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র জানান, “যখনই কর্মীসংকট দেখা দেয়, তখনই বিমান চলাচলের গতি কমিয়ে আনা হয় যাতে সুরক্ষা নিশ্চিত থাকে।”
অন্যদিকে, জাতীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারস ইউনিয়ন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরেই এই খাতে কর্মীসংকট চলছে। তাদের ভাষায়, “প্রতিদিন কিছুসংখ্যক কন্ট্রোলার অসুস্থতার কারণে কাজে অনুপস্থিত থাকেন, তবে বর্তমান সংকট দেখাচ্ছে যে আমাদের বিমান ব্যবস্থা কতটা নাজুক অবস্থায় আছে।”
সরকারি স্থবিরতা কতদিন স্থায়ী হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এর প্রভাব ইতোমধ্যেই আকাশপথে যাতায়াতকারী হাজারো যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনায় ছাপ ফেলছে।



