যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের আংশিক অচলাবস্থা (শাটডাউন) অব্যাহত রয়েছে টানা পাঁচ দিন ধরে। কংগ্রেসের দুই প্রধান দল — রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট — নতুন বাজেট বা সরকারি অর্থায়ন পরিকল্পনায় একমত হতে না পারায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর এবার এ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে সরকারি কর্মীদের গণছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যদি প্রেসিডেন্ট মনে করেন যে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো সমাধান আসছে না, তাহলে ব্যাপক পরিসরে কর্মী ছাঁটাই শুরু হতে পারে। তাঁর মতে, প্রশাসন ইতোমধ্যেই বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট এবং বাজেট টিম প্রস্তুত আছেন। তবে আমরা আশা করছি বিষয়টি সেই পর্যায়ে যাবে না। কিন্তু আলোচনার কোনো ইতিবাচক ফল না মিললে কর্মী ছাঁটাই অনিবার্য হয়ে পড়বে।”
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপে প্রেসিডেন্ট এই সম্ভাব্য চাকরিচ্যুতির ঘটনাকে “ডেমোক্র্যাট ছাঁটাই” বলে উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য, “যদি কেউ চাকরি হারায়, তবে বুঝতে হবে সেটি ডেমোক্র্যাটদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফল।”
অচলাবস্থার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট সেদিন ভার্জিনিয়ার নরফোকে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। হোয়াইট হাউস থেকে যাত্রার আগে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেন, “যা-ই ঘটুক না কেন, অনুষ্ঠান চলবেই।” তিনি এই অনুষ্ঠানকে নৌবাহিনীর শক্তি ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে আখ্যা দেন।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট নেতারা বলছেন, প্রশাসন আলোচনায় আন্তরিক নয়। তাঁদের দাবি, অচলাবস্থার সমাধান কেবল নতুন রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। সিনেটের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের নেতৃত্বের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা ছাড়া এই সংকটের অবসান ঘটবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলমান শাটডাউনের কারণে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ফেডারেল কর্মী কাজ করতে পারছেন না। সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়ছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সাধারণ সেবাখাতেও।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাটডাউন দীর্ঘায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে। সরকারি ব্যয় স্থগিত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ নাগরিক, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোও।
সব মিলিয়ে, আলোচনার অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনের সতর্ক বার্তায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে সরকারি কর্মীদের মধ্যে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সমাধান না এলে শিগগিরই তারা চাকরিহারা হতে পারেন। আর এই অবস্থার পেছনে পরস্পরকে দায়ী করছে রাজনৈতিক দুই শিবির— যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক স্থিতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলেছে।



