কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার রসুলপুর গ্রামে ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এক বৃদ্ধকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গতকাল সোমবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে, যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত—প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ওই বৃদ্ধকে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ঘটনার সময় এলাকাবাসীর কেউ কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেও নির্যাতনকারীর ভয়ে অনেকে চুপ থাকেন। পরে বিকেলে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় প্রশাসনের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রসুলপুর গ্রামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। দুই বছর আগে নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধ তাঁর ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরে সুদসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা পরিশোধের দাবি জানানো হয়। কিন্তু বৃদ্ধ সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সোমবার সকালে তাঁকে ধরে নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন জানান, বৃদ্ধের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলেও কেউ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে মুক্ত করতে সাহস পাননি। অবশেষে বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বৃদ্ধের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্যাতনের আগে তাঁরা ঋণের টাকা ফেরত দিতে কিছুটা সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্যাতনকারী সেই অনুরোধে কর্ণপাত না করে অমানবিক আচরণ করেন। বৃদ্ধের ছেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার চাই, কিন্তু জানি না কার কাছে যাব।”
ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং একই এলাকার এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
চান্দিনা থানার এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আটক ব্যক্তি একাই ওই বৃদ্ধকে নির্যাতন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি গুরুতর, তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা এমন অমানবিক নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র ঋণের টাকার জন্য একজন বৃদ্ধকে প্রকাশ্যে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা মানবিকতার পরিপন্থী। তাঁরা প্রশাসনের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করার সাহস না পায়।



