Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeপ্রযুক্তি জগৎচীনের নতুন লক্ষ্য: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে ‘সুপারইনটেলিজেন্স’-এর পথে যাত্রা

চীনের নতুন লক্ষ্য: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে ‘সুপারইনটেলিজেন্স’-এর পথে যাত্রা

চীনের প্রযুক্তি নগরী হাংঝৌতে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এক বৃহৎ প্রযুক্তি সম্মেলনে দেশটির শীর্ষস্থানীয় একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নতুন এক যুগের ইঙ্গিত দিয়েছে—যে যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মানব মস্তিষ্কের সীমা অতিক্রম করবে। সম্মেলনের বিশাল পর্দায় ভেসে ওঠে চারটি শব্দ, যা মুহূর্তেই প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোড়ন তোলে—“Roadmap to Artificial Superintelligence”।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী তাঁর মূল বক্তব্যে তুলে ধরেন ভবিষ্যতের এমন এক চিত্র, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে না, বরং তা আরও উন্নত এক পর্যায়ে পৌঁছাবে। তাঁর ভাষায়, “Artificial General Intelligence (AGI) বা সাধারণ মানবীয় জ্ঞানসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্জন এখন সময়ের ব্যাপার। তবে এখানেই এর সমাপ্তি নয়—এর পরবর্তী ধাপ হলো Artificial Superintelligence (ASI), যা মানব মস্তিষ্কের চেয়েও শক্তিশালী চিন্তা ও আত্মোন্নয়নের ক্ষমতা অর্জন করবে।”

তিনি জানান, ASI প্রযুক্তি এমন এক যুগের সূচনা করবে যেখানে প্রযুক্তির বিকাশ হবে বহুগুণে দ্রুত, যা মানব সভ্যতার গতি বদলে দিতে পারে। এই সুপারইনটেলিজেন্স ভবিষ্যতে জটিল রোগ নিরাময়, পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস আবিষ্কার, এমনকি মহাকাশ ভ্রমণের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে দুই বৃহৎ শক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—এর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। উভয় দেশই বিশাল কম্পিউটিং ক্ষমতা ও গবেষকসম্পদ নিয়ে AI প্রযুক্তির শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে মানবসদৃশ AI উন্নয়নে জোর দিচ্ছে, চীন সেখানে বাস্তবমুখী প্রয়োগে বেশি মনোযোগী।

সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে, চীন রোবট ও ‘Embodied AI’-এর ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, কারণ দেশটিতে বিশ্বসেরা রোবোটিকস সরবরাহ শৃঙ্খলা গড়ে উঠেছে। অনেক গবেষক মনে করেন, চীনের কিছু স্টার্টআপ ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বহু বছর ধরেই কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও সুপারইনটেলিজেন্স নিয়ে কাজ করছে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার প্রথমবারের মতো বড় কোনো চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি প্রকাশ্যে AGI ও ASI—এই দুটি ধারণাকে ভবিষ্যৎ কৌশলের মূলভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণার মাধ্যমে দেশটির প্রযুক্তি খাত এক নতুন প্রতিযোগিতার মঞ্চে প্রবেশ করেছে।

এই “সুপারইনটেলিজেন্স” ধারণা যদিও বহুদিন ধরেই পশ্চিমা প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোচিত, কিন্তু এবার তা চীনা কর্পোরেট নীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং কৌশলগত পদক্ষেপও বটে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই তাদের নিজস্ব ওপেন-সোর্স AI মডেল প্রকাশ করেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয়। তাদের সর্বশেষ মডেল সিরিজে টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও এবং অডিও একত্রে বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।

এই উদ্যোগের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমূল্য বেড়ে যায় রেকর্ড পরিমাণে, যা ইঙ্গিত দেয় যে বাজার এখন “AI সুপারইনটেলিজেন্স”-এর ধারণাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণা কেবল প্রযুক্তিগত স্বপ্ন নয়, বরং বাণিজ্যিক কৌশলেরও অংশ—যেখানে ক্লাউড কম্পিউটিং ও বড় মডেলভিত্তিক সেবা ভবিষ্যতের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও গবেষণাগত আগ্রহ বাড়ছে। দেশটির কংগ্রেসে কৃত্রিম সুপারইনটেলিজেন্স নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ উন্নয়ন নিয়ে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের অতি ক্ষমতাশালী AI ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপযুক্ত নীতি এখন থেকেই তৈরি করা জরুরি।

যদিও অনেকেই এখনো মনে করেন, আজকের AI এখনো যথেষ্ট উন্নত নয়—এখনও তা সহজ নিয়ম বা বাস্তব বিশ্বের কার্যকারিতা পুরোপুরি বুঝতে পারে না। তবুও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

ফলে “Artificial Superintelligence” নিয়ে আলোচনাটি আর ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, বরং প্রযুক্তি দুনিয়ার বর্তমান বাস্তবতার অংশ হয়ে উঠছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিযোগিতা শেষ পর্যন্ত কোনদিকে মোড় নেয়, তা এখন বিশ্বের নজরে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments