প্রায় সাত বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে আবারও ফেডারেল বাজেট চূড়ান্ত না হওয়ায় সরকার অচল হয়ে পড়েছে। নতুন অর্থবছরের সূচনায় কংগ্রেস সময়মতো বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ হয়, যার ফলে সরকারি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং এর প্রভাব পড়ছে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কংগ্রেস নিয়মিত সময়সীমা মেনে বাজেট অনুমোদনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে। এ বছর পরিস্থিতি আরও জটিল হয় প্রশাসনের একক সিদ্ধান্তে ব্যয়নীতিতে পরিবর্তনের প্রচেষ্টার কারণে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে।
এ অবস্থায় প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা বর্তমান ব্যয়ের সীমা সাময়িকভাবে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদলীয় সমর্থন ছাড়া কোনো প্রস্তাবই পাশ করা সম্ভব নয়। বিরোধী দল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা এমন কোনো বাজেট মেনে নেবে না যেখানে স্বাস্থ্যখাতে কাটছাঁট কিংবা প্রশাসনের একতরফা ব্যয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকবে।
বাজেট নিয়ে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ১ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তাদের জরুরি পরিকল্পনা কার্যকর করতে শুরু করেছে। ফলে বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মচারীকে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যা সামাজিক সেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা খাত পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
সরকারি শিক্ষাখাত সরাসরি ফেডারেল তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বাজেট স্থগিতের এই পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সরকারি স্কুলগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিক খরচ, শিক্ষক নিয়োগ, এবং নিম্নআয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রকল্প—সব ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়, তবে স্কুল পরিচালনায় অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। অনেক স্কুল ইতোমধ্যে বাজেট সংকটে পড়ার আশঙ্কায় কিছু কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারি পর্যায়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অচলাবস্থা শুধু বাজেটের বিষয় নয়—বরং এটি একটি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ফলাফল। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিরোধীদলীয় রাজ্যগুলোতে ব্যয় হ্রাসের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র করতে পারে।
অন্যদিকে, শিক্ষাবিষয়ক সংস্থাগুলো বলছে, শিক্ষাব্যবস্থার ওপর এই প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক অগ্রগতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ বাজেট স্থগিত থাকলে ফেডারেল সহায়তায় পরিচালিত অনেক শিক্ষা প্রকল্প থমকে যাবে।
বর্তমানে শিক্ষা খাতে ফেডারেল সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাজেট সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত সমাধানে পৌঁছাবে—এমনটাই আশা করছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহল। তবে সমঝোতা না হলে, এই অচলাবস্থা আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।