যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের একটি বড় অংশ এখন ইসরায়েলের প্রতি দেশটির সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের দাবি তুলছেন। তাঁদের মতে, গাজায় বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তা একধরনের জাতিগত নিধনের সমতুল্য। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে এই মনোভাবের সুস্পষ্ট প্রতিফলন।
একটি স্বাধীন জরিপ সংস্থা দেশজুড়ে ১ হাজার ২২১ জন নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট ভোটারের ওপর সমীক্ষা চালায়। এতে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ ভোটারই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতিতে এখন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাঁদের মধ্যে ৭২ শতাংশ স্পষ্টভাবে মনে করেন, গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। আর ৬৫ শতাংশ চান, এই কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।
বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব আরও প্রবল। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
গবেষক দল অংশগ্রহণকারীদের দুই ভাগে ভাগ করে প্রশ্ন করে। একদলকে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাপারথেইড যুগের নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস জানানো হয়, আর অন্যদলকে কোনো প্রেক্ষাপট দেওয়া হয়নি। আশ্চর্যের বিষয়, যাঁদের কাছে কোনো ইতিহাস তুলে ধরা হয়নি, তাঁরাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে বেশি মত দিয়েছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ইসরায়েলি বন্ড কেনা, ঋণ প্রদান ও আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করা উচিত কি না। ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এর পক্ষে মত দেন। একইসঙ্গে প্রায় সমানসংখ্যক ভোটার মনে করেন, ইসরায়েলের তৈরি অস্ত্র ও সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ বলেন, ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তা ও সেনাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। তাঁদের মতে, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে তথ্য বিনিময় ও সামরিক সহযোগিতাও বন্ধ করা প্রয়োজন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থ দিয়ে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করা কতটা যুক্তিযুক্ত। ৭১ শতাংশই ‘না’ বলেন। এমনকি, যখন তাঁদের বলা হয় ইসরায়েল যদি নিজেই অর্থ প্রদান করে, তাহলেও ৬৩ শতাংশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
এছাড়া, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্তত ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা কেবল সেই কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেবেন, যিনি করদাতাদের অর্থে ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠানোর বিরোধিতা করেন। তরুণ ভোটারদের মধ্যে এই অনুপাত আরও বেশি—প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
জরিপটি ১১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়। এতে ত্রুটির সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
গবেষণা পরিচালনাকারী এক কর্মকর্তার মতে, একসময় যেটিকে যুক্তরাষ্ট্রে চরমপন্থী ধারণা বলে মনে করা হতো, এখন সেটি মূলধারায় প্রবেশ করেছে। ডেমোক্র্যাট ভোটাররা এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তাঁদের করের অর্থ কোনো জাতিগত বৈষম্য বা নিপীড়নকে সমর্থন করতে পারে না। এটি দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে ওঠা সামাজিক সচেতনতার ফলাফল।
অন্যদিকে, জরিপ সংশ্লিষ্ট এক বিশেষজ্ঞের মতে, ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতৃত্বের উচিত এই নতুন বাস্তবতাকে স্বীকার করা এবং নিজেদের ভোটারদের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হওয়া। না হলে ভবিষ্যতের নির্বাচনে দলটি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।