ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে আটক আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুক্তি পাওয়া কয়েকজন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, বন্দিদশায় তাঁদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে এবং এক নারী অধিকারকর্মীকে শারীরিকভাবে অপমানিত করা হয়েছে।
মুক্তি পাওয়া সূত্রগুলো জানায়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩৭ জনকে সম্প্রতি তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক, বাকিরা যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি। এই সবাই ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র মাধ্যমে গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দিতে অংশ নিয়েছিলেন।
ফেরত আসা কয়েকজন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, আটক করার পর তাঁদের না দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত খাবার, না পানি, এমনকি মৌলিক ওষুধও পাওয়া যায়নি। অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, নির্যাতনের সময় কয়েকজনকে জোরপূর্বক ইসরায়েলি পতাকা হাতে নিতে ও তাতে চুমু খেতে বাধ্য করা হয়।
মালয়েশিয়ার এক মানবাধিকারকর্মী জানিয়েছেন, “আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে যেন আমরা মানুষ নই, যেন আমরা অপরাধী। কয়েক দিন কোনো খাবার দেওয়া হয়নি, পানি না পেয়ে টয়লেটে থাকা পানি খেতে বাধ্য হয়েছি।”
একজন তুর্কি অংশগ্রহণকারী জানান, “এত গরমে বন্দিদশায় থাকা ছিল যন্ত্রণার চূড়া। গাজাবাসীর কষ্টের কিছুটা আমরা সেই সময় অনুভব করেছি।”
ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া ইতালির এক সাংবাদিক বলেন, “আমরা দেখেছি, এক তরুণী নারী কর্মীকে মাটিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর গায়ে জোর করে ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন তাঁকে একটি প্রতীকে পরিণত করা হচ্ছে।”
আরেক অধিকারকর্মী জানান, ইসরায়েলের এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তাঁদের কক্ষে প্রবল ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। সেই সময়ও নির্যাতন ও অপমানের দৃশ্য ঘটে।
তুরস্কের আরও কয়েকজন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, বন্দিশালার দেয়ালে তাঁরা আগের বন্দিদের লেখা রক্তমাখা বার্তা ও নাম দেখতে পেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, ওই লেখাগুলো ছিল ফিলিস্তিনিদের। “আমরা বুঝতে পেরেছি, তারা কতটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে,” বলেন এক নারী অধিকারকর্মী।
ইতালির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আটক হওয়া তাঁদের ২৬ জন নাগরিককে ফেরত আনা হয়েছে, তবে আরও ১৫ জন এখনো ইসরায়েলে বন্দি রয়েছেন।
অধিকার সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে—খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবার অভাবের পাশাপাশি তাঁদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে মৌলিক মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, এসব তথ্য “সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন”। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বন্দিদের সাক্ষ্য ও প্রমাণ ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।