গাজার সশস্ত্র সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব ও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে পরামর্শের পর কিছু শর্ত মেনে নিতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ওই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার কিছু শর্তে রাজি হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কূটনৈতিক পর্যায়ে সক্রিয় উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এসব প্রস্তাব ও আহ্বানের মাঝেই শনিবার গাজায় একটি তাজা বিমান ও ট্যাংক হামলায় অন্তত ৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন — যা সংঘাত উত্তাপ কমেনি বলে ইঙ্গিত দেয়।
সংগঠনটির ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ফিলিস্তিনি অঙ্গ ও মধ্যস্থতাকারী পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ শেষে তারা জিম্মিদের মুক্তি এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত গ্রহণে রাজি হয়েছে; বাকি শর্তগুলো নিয়ে চলমান আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তারা স্বীকার করেছে। এই বিবৃতির পরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এটিকে ‘সমস্যা সমাধানের পথে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে স্বাগত জানান। তবে কাজটি বাস্তবে পরিণত করতে তৎপরতা দরকার — এমনই মন্তব্য এসেছে কয়েকটি কূটনৈতিক ঘরানার পক্ষ থেকে।
ঘোষণার পরের সময় ইসরায়েলের সরকারি মহলে বলা হয়েছে, তারা শান্তি প্রক্রিয়া কার্যকর করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করবে এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবিত কর্মসূচির প্রথম ধাপ কার্যকর করতে প্রস্তুত। একই সময়ে সংঘ এলাকায় সামরিক কার্যক্রম রুদ্ধ করার তাগিদ দেয়া হলেও, মাঠে এখনও গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা ও ট্যাংক চলাচল অব্যাহত রয়েছে; প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজার বিভিন্ন শহরে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার শব্দ শোনা গেছে এবং দক্ষিণাঞ্চলও আক্রান্ত হয়েছে।
প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় একটি বিতর্কিত দিক ছিল—গাজা থেকে বিদেশী বা সংগঠনের বহি:স্থ অংশের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনটি এক পর্যায়ে সম্মত হয়েছিল গাজার প্রশাসন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার নিকট হস্তান্তরের বিষয়ে, তবে সে সংস্থায় বিদেশিদের সরাসরি অংশগ্রহণকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে; সংস্থাটি বলেছে, যে কোনো ব্যবস্থা জাতীয় ঐক্য ও আরব-ইসলামিক বিশ্বের সমর্থনের ভিত্তিতে গঠিত হতে হবে। একই সঙ্গে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে সংগঠনটি স্পষ্টভাবে অনিশ্চয়তা রেখেছে—দখল অবসান না হলে সম্পূর্ণ অস্ত্র ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নে তারা অনড় অবস্থান দেখিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা, সংঘাতবিরতি ও মানবতাব্সী সহায়তা বাড়াতে এই মুহূর্তকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মধ্যস্থতা চেষ্টায় দীর্ঘদিন থেকেই নিয়োজিত কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে আশাপ্রকাশ করেছেন যে, ঘনিষ্ঠ মধ্যস্থতার ফলে সংঘাত থামার পথ প্রশস্ত হতে পারে। পাশাপাশি কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চ পর্যায়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে সশস্ত্র কার্যকারিতা বন্ধ করে কূটনৈতিক মঞ্চে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজক্ষণই ঘোষণার পরে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রত্যাশা বাড়লেও মাঠের উপরিভাগে সহিংসতা থামেনি — এমনকি সরকারি সূত্র থেকে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয় যে সাম্প্রতিক হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে মানবিক সংকট, ত্রাণ সরবরাহের জটিলতা এবং গাজার পুনর্গঠন কাজে বাধা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী ও জিম্মিদের পরিবারসমূহ তৎপরতার সঙ্গে এগুলো সমাধান চাইছে এবং দ্রুত কার্যকর আলোচনার ডাক দিয়েছে।
সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত শর্তে কিছু একমত হওয়ার ঘোষণাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করার জন্য অবিলম্বে মাঠে সহিংসতা বন্ধ ও নির্দিষ্ট কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো দ্রুত কার্যকর না হলে চলমান স্থায়িত্বহীনতা ও জনদুর্ভোগ অব্যাহত থাকতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষক ও তৎপর তৃতীয় পক্ষগুলো।