ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় রিকশাচালক খোকন মিয়াকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় নেতাকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার ভোরে সংগঠনের জেলা উত্তর শাখার পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার রাতে। পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জের করমা গ্রামে রিকশাচালক খোকন মিয়াকে হাত-পা ভেঙে এবং বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, জমি নিয়ে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জের ধরেই এই হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, খোকন মিয়াকে পিটিয়ে আহত করার পর উঠানে ফেলে রাখা হয়। তিনি তীব্র ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে পানির জন্য চিৎকার করলেও আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ারও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। রাত একটার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে পানি পান করায় এবং স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় নিহতের ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে শনিবার থানায় মামলা করেন। মামলায় ইউনিয়নের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫–৬ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রনেতা এখনও পলাতক রয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে এভাবে হত্যা করা অমানবিক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়লে, সংগঠনের জেলা উত্তর শাখা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ভোরে সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয়—সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গুরুতর অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলামকে সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। যে কোনো মূল্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
নিহত খোকন মিয়ার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাঁর পরিবার এখন দিশেহারা। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।