শুক্রবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের জবাব পৌঁছালে হোয়াইট হাউসে দ্রুত প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। প্রায় পাঁচ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে হামাস একটি ছয় অনুচ্ছেদের বিবৃতি প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এতটাই তৎপরভাবে বিষয়টি গ্রহণ করে যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতির পুরো পাঠ শেয়ার করা হয়। এমনকি এক পর্যায়ে সেটি প্রেসিডেন্টের নিজের পক্ষ থেকে এসেছে বলেও ভুলভাবে প্রকাশ করা হয়।
তবে হামাসের জবাব পূর্ণ সমর্থন ছিল না। ২০ দফার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শর্ত—যেমন অস্ত্র সমর্পণ, সামরিক শক্তি ধ্বংস করা, এবং ভবিষ্যতে গাজা শাসনে কোনোভাবেই যুক্ত না থাকা—এসব বিষয়ে হামাস নির্দিষ্ট সম্মতি দেয়নি।
তবুও প্রেসিডেন্ট ভিন্ন দিকটি তুলে ধরেন। তার মতে, হামাসের ঘোষণায় একটি বড় অগ্রগতি হয়েছে—সেটি হলো গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে যারা বন্দি রয়েছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার পর এই অংশটিই তিনি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে গ্রহণ করেন। ফলে, বিস্তারিত এখনো অনিশ্চিত হলেও, তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এটি বড় একটি ধাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
হামাসের বিবৃতির প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান। এতে তিনি লেখেন, “হামাসের এই বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েল অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করুক, যাতে দ্রুত এবং নিরাপদে বন্দিদের মুক্ত করা যায়।”
এদিকে, হামাসের প্রতিক্রিয়ার আগে ইসরায়েলের তরফ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান প্রকাশিত হয়নি। প্রেসিডেন্ট এবং তার টিম সপ্তাহজুড়ে ইসরায়েলকে প্রস্তাব গ্রহণে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও, হামাসের জবাব প্রকাশের পর প্রেসিডেন্টের দ্রুত প্রতিক্রিয়া কার্যত ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াকে আড়াল করে দেয়।
শনিবার সকালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা বন্দি মুক্তির প্রথম ধাপ অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা প্রেসিডেন্ট ও তার টিমের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাবো, যাতে যুদ্ধের অবসান ঘটে এবং ইসরায়েলের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।”
শুক্রবার রাতেই প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “এটি একটি বড় দিন। অনেক দিক থেকে অভূতপূর্ব।”
এখনো অনেক শর্ত বাকি থাকলেও, হামাসের জবাবের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা এক নতুন মোড় নিয়েছে। তবে কতটা বাস্তবায়ন হবে আর কতটা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে থেকে যাবে—তা সময়ই বলে দেবে।