যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে দেশটির বিভিন্ন কলেজকে ফেডারেল তহবিলের সুবিধা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী মানতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গি, আন্তর্জাতিক ভর্তি এবং নীতিমালা নির্ধারণ করা।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, এই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো কলেজে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বাধিক ১৫% হবে। এছাড়া, ভর্তি এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিঙ্গ বা জাতিভিত্তিক বৈষম্য চলবে না এবং কলেজগুলোকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য টিউশন ফি স্থির রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের SAT বা সমমানের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে এবং গ্রেডের অতিরিক্ত বৃদ্ধি কমিয়ে আনতে হবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, নতুন নীতিতে বলা হয়েছে যে শিক্ষার্থীরা “আমেরিকান ও পশ্চিমা মূল্যবোধের সমর্থক” হতে হবে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্র দেশসমূহের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করে, তাদের ভর্তি থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের সমস্ত তথ্য, যেমন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত রেকর্ড, চাহিদা অনুযায়ী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মধ্যে স্টুডেন্ট ভিসা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী সংখ্যা ১৫% এর বেশি হতে পারবে না এবং কোনো এক দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বাধিক ৫% হতে পারবে। বর্তমানে এই সীমা অতিক্রম করা প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ভর্তি শ্রেণীকে এই সীমার মধ্যে আনতে হবে।
ব্রিফিং অনুযায়ী, কলেজগুলো যদি এই শর্তাবলী মেনে চলে, তবে তারা “উল্লেখযোগ্য ফেডারেল তহবিল” এবং অন্যান্য সুবিধা পাবে। এই শর্তাবলীর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট করবে এবং যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম ভঙ্গ করবে, তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
সম্প্রতি, প্রশাসন কয়েকটি কলেজে তদন্ত চালিয়েছে, বিশেষ করে প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। ইতিমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারী চাহিদা মেনে সমঝোতা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারকে ২২০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে, আর অন্যটি স্থানীয় কর্মশক্তি উন্নয়নে ৫০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি, আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতা হতে যাচ্ছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা এবং অধিকার সংরক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই পদক্ষেপগুলো শিক্ষার স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার সীমিত করতে পারে। তবে প্রশাসন দাবি করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু প্রতিষ্ঠান “অ্যান্টি-আমেরিকান” এবং রক্ষণশীল মানসিকতার বিরোধী মূল্যবোধ লালন করছে।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও প্রশাসনিক দলের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে, কিছু প্রশাসনিক ইউনিটকে পুনর্গঠন বা বিলুপ্ত করতে হতে পারে, যাতে রক্ষণশীল ধারনার প্রতি অবমাননা বা সহিংসতা সৃষ্টি না হয়।
এই পদক্ষেপগুলোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভর্তি, শিক্ষার্থীর বৈচিত্র্য, এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, এ ধরনের নীতি প্রয়োগের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতা, গোপনীয়তা এবং ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।