গাজামুখী মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের ওপর ইসরায়েলি নৌবাহিনীর অভিযান আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়েছে। এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান রয়েছে, যেগুলোতে ৪৪টি দেশের ৫০০-এর বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা আছেন।
মধ্য ভূমধ্যসাগরে, গাজার উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থানরত নৌবহরটি বুধবার রাতে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করে। নৌযানগুলো থামিয়ে অন্তত ২০০-এর বেশি অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মীও রয়েছেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার উদ্দেশে যাওয়া যে কোনো নৌযানকে তারা থামাবে, কারণ তাদের দাবি, অবৈধ নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০০৭ সালের পর থেকে হামাসের দখলে থাকা গাজায় ইসরায়েল অবরোধ চালাচ্ছে। এতে করে গাজার মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার ওপর নির্বিচার হামলার ফলে দুই বছরেরও বেশি সময়ে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট সেখানে তীব্র আকার নিয়েছে।
ফ্লোটিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌযানগুলো থামিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জ্যামার ব্যবস্থা চালু করেছে। অন্তত ১৩টি নৌযান আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে স্পেন, ইতালি, তুরস্ক এবং মালয়েশিয়া থেকে আসা শতাধিক মানুষ রয়েছেন।
তবে ফ্লোটিলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের পরও গাজার দিকে ৩০টির বেশি ত্রাণবাহী নৌযান অগ্রসর হচ্ছে। তারা গাজার জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বহরের স্থানীয় সময় অনুযায়ী, বাধা না এলে আজ বৃহস্পতিবার গাজায় পৌঁছানোর কথা ছিল।
বৃহৎ বহরের এই অভিযান ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়েছে। আটক অধিকারকর্মীদের খবরে রোম, বুয়েনস এইরেস, ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ হয়েছে। ফ্লোটিলার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী লাইভস্ট্রিম বন্ধ করে এবং নৌযানগুলো অবৈধভাবে আটক করেছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটককৃতদের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের অবস্থান আপাতত অনিশ্চিত। ইসরায়েলি ভিডিওতে দেখা গেছে, আটককৃতরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।
ইসরায়েল ২০০৯ সাল থেকে গাজায় অস্ত্র পাচার ঠেকাতে নৌ অবরোধ চালাচ্ছে এবং ফ্লোটিলার সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক থাকার দাবি জানাচ্ছে। তবে এ দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ দেখানো যায়নি।
এর আগে ২০১০ সালে, মাভি মারমারা জাহাজের ঘটনা সবচেয়ে কুখ্যাত। তুরস্কের জাহাজে ইসরায়েলি কমান্ডোরা অভিযান চালালে সংঘর্ষে ১০ অধিকারকর্মী নিহত হন। পরে ২০১৩ সালে ইসরায়েল ‘কার্যকর ভুলের’ জন্য ক্ষমা চায়। ২০১১–২০১৮ সালে ছোট ফ্লোটিলাগুলো আটক হয় এবং কর্মীদের কার্গো বাজেয়াপ্ত করা হয়।
২০২৫ সালের জুনে সিসিলির কাতানিয়া থেকে গাজার দিকে যাওয়া একটি নৌযানও আটক হয়। তৎকালীন নৌযানে ১২ অধিকারকর্মী ছিলেন, পরে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এবারের গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ৩১ আগস্ট স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করে এবং ইতালির সিসিলি, তিউনিসিয়া ও গ্রিসের কিছু নৌযান এতে যুক্ত হয়। শুরুতে ৫০টির বেশি নৌযান এবং ৪৪টি দেশের শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নৌযানগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য মানবিক ত্রাণ ছিল।
ফ্লোটিলার যাত্রা চলাকালীন কিছু বৈরী পরিস্থিতি যেমন সন্দেহভাজন ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবুও বহরটি অগ্রসর হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পেন ও ইতালির নৌবাহিনী পর্যবেক্ষণ ও সহায়তার জন্য নৌযান মোতায়েন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।