Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশপদ্মায় বিলীন ৩৫ কোটি টাকার নদী তীর রক্ষা বাঁধ

পদ্মায় বিলীন ৩৫ কোটি টাকার নদী তীর রক্ষা বাঁধ

বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায় পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের একটি বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর এই ভাঙনের কারণে নির্মাণাধীন বাঁধের ৩৫ কোটি টাকার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ভেসে গেছে। স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, এক মাস ধরে এই ভাঙনের ফলে প্রায় ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপজেলা জুড়ে পূর্ব নাওডোব ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত মোট ৮.৬৭ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে। তবে জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে কাথারিয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের মুখে পড়েছে। নদী ভেঙে স্থানভেদে ১০ মিটার থেকে ১১০ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। স্থানীয়রা এবং পাউবোর কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রকল্পের ধীরগতির কারণে এই ভাঙন ঘটেছে।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা নদী জাজিরার নাওডোব এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়। নদী তীরের ভাঙনের বিরুদ্ধে মানুষকে রক্ষা করার জন্য ২০২৩ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮৬০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পে পূর্ব নাওডোবা, পালেরচর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাশপুর ইউনিয়নের নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ এবং পাথরের ব্লক দিয়ে বাঁধের কাজ চলছিল।

প্রকল্পে মোট ৩১টি গুচ্ছ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। গত বছর মে মাসে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করা হলেও বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের এক কিলোমিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বিশেষ করে জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে পালেরচর কাথারিয়াকান্দি পর্যন্ত নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধের এই দুই কিলোমিটার অংশে প্রায় ৫ লাখ ২৪ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভেসে গেছে। এই জিও ব্যাগের মূল্য ৩৫ কোটি টাকা।

স্থানীয়রা জানান, নদীর তীরের বাসিন্দারা নিজেদের বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। জিরোপয়েন্ট থেকে পালেরচর বাজার যাওয়ার যে সড়ক ছিল, তার দেড় কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে নদী স্থানভেদে ১০–১১০ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করছে। নদীর তীরজুড়ে পাথরের ব্লক জড়ো করা হলেও কিছু অংশও নদীতে বিলীন হয়েছে।

প্রকল্পের ওই ১০টি প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটির কাজ বাস্তবায়ন করছে নৌবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড। এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পাওয়ার অন্তত সাত মাস পরে প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজের কাজ শুরু করেছে। জুলাই মাসে ভাঙন শুরু হওয়ায় মানুষের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

একজন কৃষক জানিয়েছেন, ‘বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু হারালাম। মা–বাবার কবরও নদীতে চলে যাবে’। অন্য একজন জানান, কাজের ধীরগতির কারণে তাদের সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কিছু অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভবিষ্যতে ডিজাইন সংশোধন করে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে কিছু অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments