আমেরিকায় রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ২২ বছর বয়সী রবিনসনকে ঘিরে বেরিয়ে এসেছে নানান তথ্য। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেই পরিকল্পনার প্রমাণও মিলেছে।
চার্লি কার্ককে ১০ সেপ্টেম্বর উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বক্তৃতা চলাকালে গুলি করে হত্যা করা হয়। আদালতে হাজির হওয়ার সময় রবিনসনকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে দেখা যায় এবং বিচারক তাকে জামিন অযোগ্য অপরাধে আটক রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তার জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগের কথাও জানান।
তদন্ত নথিতে উল্লেখ রয়েছে, রবিনসনের কীবোর্ডের নিচ থেকে একটি নোট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল— তিনি কার্ককে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, কার্কের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেই তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল, এমনকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিশুদের উপস্থিতির বিষয়টিও তিনি জেনেশুনে উপেক্ষা করেছিলেন।
হত্যার পর রবিনসন অস্ত্র গোপন করেন, ব্যবহৃত পোশাক ফেলে দেন এবং তার রুমমেটকে মোবাইল থেকে প্রমাণ মুছে ফেলতে বলেন। গ্রেফতারের পর জানা যায়, হত্যায় ব্যবহৃত রাইফেলটি ছিল তার দাদার উপহার, যা তার বাবার কাছেই সংরক্ষিত ছিল। রবিনসনের ডিএনএ সেই অস্ত্র থেকে উদ্ধার করেছে তদন্ত দল।
তদন্তে আরও জানা যায়, হত্যার আগে ও পরে তিনি তার সঙ্গীকে একাধিক বার্তা পাঠিয়েছেন। এক বার্তায় তিনি লিখেছিলেন— “আমি চার্লি কার্ককে সরানোর সুযোগ পেয়েছি, আর আমি সেটা নিতে যাচ্ছি।” এছাড়া হত্যার পর তিনি স্বীকার করেন যে, কার্কের ঘৃণামূলক বক্তব্য আর সহ্য হচ্ছিল না।
পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্যও রবিনসনের জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছিল। তার মা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, এক সময়কার ডানপন্থী ছেলে ধীরে ধীরে বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শে ঝুঁকে পড়েছিল। ট্রান্সজেন্ডার একজন সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকেই তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। অন্যদিকে, তার বাবা ছিলেন প্রবল ডানপন্থী। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে একাধিকবার তর্কাতর্কি হয়।
হত্যার পর কর্তৃপক্ষ যখন অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ করে, তখনই প্রথম রবিনসনকে চিনতে পারেন তার মা। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে মুখোমুখি করলে তিনি আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে পরিবারের চাপে অবশেষে এক অবসরপ্রাপ্ত শেরিফের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
রবিনসনের পরিবার উটাহ অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সেন্ট জর্জ এলাকায় বসবাস করে। তিনি ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় চার্চ অব জেসাস ক্রাইস্ট অব ল্যাটার-ডে সেইন্টসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রকৃতিপ্রেমী এই পরিবার প্রায়ই আউটডোর কর্মকাণ্ডে অংশ নিত— নৌভ্রমণ, মাছ ধরা, শুটিংসহ নানা বিনোদনমূলক কাজে। তবে কী কারণে রবিনসনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এ পরিবর্তন এসেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।