যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন ও হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন। শনিবার তাঁর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মুখপাত্রের ভাষায়, প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট রেডিয়েশন থেরাপি ও হরমোন চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য জরুরি ধাপে পরিণত হয়েছে।
গত মে মাসে জানা যায়, তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে এবং তা শরীরের হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তখন চিকিৎসক দল দ্রুত তাঁর জন্য চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি নিজেই একটি বার্তা দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “ক্যানসার আমাদের সবাইকে কোনো না কোনোভাবে ছুঁয়ে যায়। আমরা বুঝেছি, জীবনের সবচেয়ে ভঙ্গুর সময়েই মানুষ সবচেয়ে দৃঢ় হতে শেখে। সবাইকে ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।”
এর আগেও ক্যানসারের সাথে এই পরিবারের লড়াই নতুন নয়। সাবেক প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে ২০১৫ সালে ক্যানসারে মারা যান। সেই অভিজ্ঞতার কারণে পরিবারটি এবারও দৃঢ় মনোবলে চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্যমতে, প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসারগুলোর একটি। বিশেষত বয়স্ক পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। গবেষণা অনুযায়ী, ৮০ বছর বয়সের বেশি পুরুষদের প্রায় ৮০ শতাংশের প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ক্যানসারজনিত কিছু কোষ পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবুও এটি এখনো পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত।
চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, হরমোন থেরাপি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা শরীরের হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টিউমারের আকার ছোট করে এবং ক্যানসারের অগ্রগতি ধীর করে দেয়। যদিও এই থেরাপি ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে না, তবে এটি রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেয় এবং জীবনকাল বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি ও হরমোন চিকিৎসা একসঙ্গে ব্যবহার করা হলে সাধারণত ভালো ফলাফল পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এতে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ধ্বংস হয় এবং নতুন কোষের বৃদ্ধি ধীর হয়, যা রোগের বিস্তার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হলেও, সময়মতো শনাক্ত করা গেলে রোগের অগ্রগতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের নিয়মিত প্রোস্টেট পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ খুবই সামান্য থাকে, যা অনেক সময় অজান্তেই উপেক্ষিত হয়।
বর্তমানে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা জানিয়েছেন, তিনি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন এবং শারীরিকভাবে ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন।
বিশ্বজুড়ে অনেকেই তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন।



