দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির আওতায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ অর্থ “অগ্রিম” প্রদানের দাবি তোলা হলেও সিউলের প্রেসিডেন্টের এক শীর্ষ উপদেষ্টা স্পষ্ট করেছেন—এমন বিপুল অর্থ নগদে প্রদান করা বাস্তবসম্মত নয় এবং দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
গত জুলাইয়ে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দক্ষিণ কোরিয়া জানায়, প্রতিশ্রুত ৩৫০ বিলিয়ন ডলার মূলত ঋণ, ঋণ গ্যারান্টি এবং ইকুইটি আকারে দেওয়া হবে, নগদ অর্থ হিসেবে নয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্ব মন্তব্য করেছেন যে এই অর্থ সরাসরি নগদ আকারে প্রদান করা হবে, যা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন—“আমাদের অবস্থান কোনো কৌশলগত আলোচনা নয়, বরং এটি একটি বাস্তব ও যৌক্তিক বাস্তবতা। আমরা নগদ ৩৫০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করতে পারব না।” তাঁর মতে, এ ধরনের অগ্রিম অর্থ প্রদান দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বড় ধরনের সংকটে ফেলতে পারে।
জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রকল্পে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ অর্থের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার দাবি তোলা হলে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। বর্তমানে দুই দেশের কর্মকর্তারা সমঝোতার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ব্যাপারে একমত হতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব সম্প্রতি আবারও দাবি করেছেন যে, তাঁর প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে দেশটিতে বিপুল অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন—“জাপান থেকে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার অগ্রিম আসছে।” তবে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতা মেলে না।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, সুরক্ষা ব্যবস্থা যেমন মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (কারেন্সি সুইপ) না থাকলে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে পড়বে। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১০ বিলিয়ন ডলার হলেও হঠাৎ করে এত বিশাল অঙ্কের অর্থ নগদে দেওয়া সম্ভব নয়।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, “যদি নগদ অর্থ হিসেবে অগ্রিম প্রদানের শর্ত থাকত, তাহলে এর যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না যে এটি আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” তিনি যোগ করেন, সিউল বিকল্প পথ খুঁজছে এবং আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (APEC) সম্মেলনকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বও যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই অবস্থান স্পষ্ট করেছে যে, ওয়াশিংটনের দাবি মতো নগদ অর্থ প্রদান অসম্ভব। তবে বিকল্প সমাধানের মাধ্যমে চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।