ফুটবল বিশ্বকাপের সঙ্গে আমরা সবসময় জুন-জুলাই মাসকে যুক্ত করি। উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালেই অনুষ্ঠিত হওয়া এই মহা আসর বছরের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের ঘটনা এই ধারা ভেঙে দিয়েছিল। ২০২২ সালে মরুর অতিরিক্ত তাপ এড়াতে নভেম্বরে শুরু হয়েছিল টুর্নামেন্ট। এ কারণে ইউরোপের বড় বড় লিগগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে মাঝপথে বিরতি নিতে হয়েছে।
এবার নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ। সৌদি আরব এই আসরের আয়োজক দেশ হিসেবে নাম উঠে এসেছে। ফিফার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাসের আবহাওয়া সবচেয়ে সহনীয়। এই সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। অন্যদিকে, মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ওঠানামা করে ১৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত। প্রচলিত বিশ্বের জুন-জুলাই মাসে, যখন সাধারণত বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে দিনের তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রিরও ওপরে উঠে যায়। এই কারণে সম্ভাব্যভাবে ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ শীতকালে আয়োজন করা হতে পারে।
এটি শুধুমাত্র ২০৩৪ সালের জন্য প্রযোজ্য নয়। ভবিষ্যতের সব বিশ্বকাপও শীতকালে করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফিফার সভাপতি সম্প্রতি ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন যে, এ বিষয়ে খোলা মন রাখতে হবে। তিনি বলেন, “এটি শুধু একটি বিশ্বকাপের ব্যাপার নয়। পুরো ফুটবল পরিবেশকে লক্ষ্য করে ভাবা প্রয়োজন। ইউরোপের অনেক দেশে জুলাইয়ের গরমে খেলা ভীষণ কষ্টকর। তাই আমাদের সূচি নতুনভাবে সাজানো প্রয়োজন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “ফুটবলের সেরা সময় হতে পারে জুন, কিন্তু ইউরোপের পরিস্থিতি সেই সময়কে কাজে লাগাতে বাধা দেয়। সুতরাং সূচি আরও কার্যকরভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে। আমাদের দরকার সবার খোলা মন।” ইনফান্তিনো আরো বলেন, “পৃথিবীতে গ্রীষ্ম আছে, শীতও আছে। যদি আমরা চাই বিশ্বব্যাপী একই সময়ে খেলা হবে, তবে মার্চ বা অক্টোবর মাসে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যেতে পারে। ডিসেম্বরের কোনো এক দেশে খেলা সম্ভব নয়, আবার জুলাইয়ে অন্য কোনো দেশে।”
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবল ইভেন্টের সূচি ২০৩০ পর্যন্ত নির্ধারিত। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। এই আসর প্রচলিত সময় জুন-জুলাইতে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে মরক্কো, পর্তুগাল ও স্পেন। শতবর্ষ উপলক্ষে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়েতে অংশগ্রহণমূলক কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল উরুগুয়ে, তাই শতবর্ষে তাদের মাঠে কিছু ম্যাচের আয়োজনও থাকবে।
২০৩৪ সালের সৌদি আরব বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্ব ফুটবলের সূচি বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে এগোতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের সূচি পরিবর্তন খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ও খেলার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। ফলে কেবল একটি দেশ নয়, সমগ্র বিশ্ব ফুটবল নতুন রূপে উপভোগ করতে পারবে।
ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সময়সূচি গরমের পরিবর্তে শীতকালকে প্রধান করে আনা হলে, খেলোয়াড়, ক্লাব এবং দর্শক সকলেই উপকৃত হবেন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সূচি বাস্তবায়ন এই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করবে।



