ফুটবলের মৌসুম মানেই নতুন আশা, নতুন প্রতিযোগিতা এবং পুরোনো লড়াইয়ের নতুন গল্প। ভোরের সূর্যের মতোই মৌসুমের শুরুটা অনেক সময় উজ্জ্বল হয়, কিন্তু সেই আলো দিনের শেষে টিকে থাকে না সবসময়। কারণ খেলাটির প্রকৃতি যেমন অনিশ্চিত, তেমনি খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সও নির্ভর করে শতভাগ ছন্দ, ফিটনেস আর দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ওপর। তবু একটা বিষয় স্পষ্ট—যে খেলোয়াড়রা মৌসুমের শুরুতে আগুন ঝরান, তাঁরাই পরবর্তী সময়ের প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নেন।
এই মৌসুমের শুরুতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিন তারকা—হ্যারি কেইন, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড। তিনজনই গোলের পর গোল করে নিজেদের ছন্দে ফিরেছেন, এবং ফুটবলবিশ্বে জাগিয়ে তুলেছেন কে হতে যাচ্ছেন মৌসুমের রাজা, সেই প্রশ্ন।
হ্যারি কেইন: নতুন দেশে নতুন উচ্চতায়
বুন্দেসলিগায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই কেইনের পারফরম্যান্স যেন আগুন ছড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত লিগের ছয় ম্যাচে সব কটিতে জিতেছে তাঁর দল, এবং গোল করেছে ২২টি। আশ্চর্যের বিষয়—এই ২২ গোলের অর্ধেকই এসেছে কেইনের পা থেকে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর গোলসংখ্যা ১১, সঙ্গে রয়েছে আরও ৩টি অ্যাসিস্ট।
চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচে তিনি করেছেন ৪ গোল, আর জার্মান কাপ ও সুপার কাপ মিলিয়ে আরও ৩টি। অর্থাৎ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। এই ধারাবাহিকতা যদি মৌসুমজুড়ে ধরে রাখতে পারেন, তবে কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনই নয়, তাঁর ক্লাবও শিরোপার দৌড়ে থাকতে পারে বেশ এগিয়ে।
কিলিয়ান এমবাপ্পে: নতুন অধ্যায়ে সাফল্যের গল্প
পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমিয়ে এমবাপ্পে নতুন চ্যালেঞ্জে নেমেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি বরাবরই উজ্জ্বল ছিলেন, তবে এবার তাঁর লক্ষ্য—দলের সাফল্যের সঙ্গে নিজের পারফরম্যান্সকে মিলিয়ে নেওয়া।
লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদ এখন শীর্ষে, ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জয়। গোলসংখ্যা ২১, যার মধ্যে ৯টি এসেছে এমবাপ্পের কাছ থেকে। পাশাপাশি রয়েছে ২টি অ্যাসিস্ট। চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচে তাঁর গোল ৫টি, যার মধ্যে একটি হ্যাটট্রিকও আছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মৌসুমের শুরুতে ১০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ১৪।
যদি এমন ছন্দ বজায় থাকে, তবে মৌসুম শেষে রিয়াল ও এমবাপ্পে দুজনই হতে পারেন শিরোপার আসল দাবিদার।
আর্লিং হলান্ড: স্থিতিশীল শক্তি, সিটির ভরসা
ম্যানচেস্টার সিটি মৌসুমের শুরুতে কিছুটা ধাক্কা খেলেও, হলান্ডের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দলকে রেখেছে লড়াইয়ে। প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে করেছেন ৯ গোল, সঙ্গে একটি অ্যাসিস্ট।
চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচে তাঁর গোল ৩টি। অর্থাৎ ৯ ম্যাচে মোট ১২ গোল। এই সংখ্যাই প্রমাণ করে, হলান্ড এখনও ইউরোপের অন্যতম ভয়ংকর স্ট্রাইকার।
গত মৌসুমে তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিচে ছিলেন, কিন্তু এবার তাঁর আগুনে ফর্মই সিটিকে আবার গতি এনে দিয়েছে। প্রিমিয়ার লিগে খেলা সাত ম্যাচের মধ্যে ছয়টিতে গোল করেছেন তিনি, যা দলের আত্মবিশ্বাসকে অনেক বাড়িয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কে শীর্ষে?
তিনজনই নিজেদের সেরাটা দিচ্ছেন, তবে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত সেই ছন্দ ধরে রাখাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। ফুটবলে যেমন ভাগ্য বড় ভূমিকা রাখে, তেমনি চোট, বিশ্রাম ও ফিটনেসও নির্ধারণ করে দেয় কে হাসবেন শেষ হাসি।
হ্যারি কেইনের ধারাবাহিকতা, এমবাপ্পের উজ্জ্বল উপস্থিতি ও হলান্ডের গোলের ক্ষুধা—সব মিলিয়ে এই মৌসুম হতে যাচ্ছে গোলের উৎসব। শেষ পর্যন্ত কে এগিয়ে থাকবেন, সেটিই এখন ফুটবল দুনিয়ার বড় আলোচ্য বিষয়।



