Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যহরমোন ছাড়াই মেনোপজের গরম ভাব কমাতে নতুন ওষুধের অনুমোদন পেল যুক্তরাষ্ট্র

হরমোন ছাড়াই মেনোপজের গরম ভাব কমাতে নতুন ওষুধের অনুমোদন পেল যুক্তরাষ্ট্র

মেনোপজজনিত গরম ভাব বা “হট ফ্ল্যাশ” দীর্ঘদিন ধরে নারীদের অন্যতম সাধারণ সমস্যাগুলোর একটি। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) হরমোনবিহীন একটি নতুন ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে, যা এই সমস্যার কার্যকর সমাধান দিতে পারে।

এই নতুন ওষুধের নাম এলিনজানেটান্ট (Elinzanetant), যা প্রতি দিনে একবার খাওয়া যায় এমন একটি পিল। এটি নভেম্বর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ‘লিংকুয়েট’ (Lynkuet) ব্র্যান্ড নামে পাওয়া যাবে। এই ওষুধটি তৈরি করেছে একটি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি, যারা জানিয়েছে—এটি মস্তিষ্কে থাকা কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো মূলত গরম ভাব ও রাতের ঘাম বা ভ্যাসোমোটর লক্ষণ (Vasomotor Symptoms) সৃষ্টি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজে থাকা প্রায় ৮০ শতাংশ নারী এই গরম ভাবের সমস্যায় ভোগেন। তাই এই ওষুধের অনুমোদনকে নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি হলো মেনোপজের ভ্যাসোমোটর উপসর্গ উপশমের জন্য প্রথম হরমোনবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি।

অনেক নারীর জন্য হরমোন থেরাপি মেনোপজের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হলেও, যাদের কিছু বিশেষ শারীরিক জটিলতা বা ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, তাদের জন্য হরমোনভিত্তিক চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ ধরনের রোগীদের জন্য লিংকুয়েট হতে পারে একটি নিরাপদ বিকল্প।

একটি তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৬২৮ জন মেনোপজ-পরবর্তী নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেখা যায়, যারা ১২ সপ্তাহ ধরে এলিনজানেটান্ট ব্যবহার করেছেন, তাদের ভ্যাসোমোটর উপসর্গের হার ৭৩ শতাংশের বেশি কমে গেছে। অন্যদিকে, প্লাসিবো (ডামি ওষুধ) গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব নারীরা এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে ঘুমঘুম ভাব, ক্লান্তি ও মাথাব্যথা ছিল সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

গবেষণা দলের মতে, এক বছরের এই স্টাডিতে দেখা গেছে—ওষুধটি শুধু দ্রুত উপসর্গ কমায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদেও এর কার্যকারিতা টিকে থাকে। এতে নারীদের জীবনের মান উন্নত হয়, কর্মস্থলে ও ঘরোয়া জীবনে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

মেনোপজের সময় হট ফ্ল্যাশ বলতে বোঝায় হঠাৎ শরীরে অতিরিক্ত গরম অনুভব হওয়া, যা মূলত মুখ, গলা ও বুকে কেন্দ্রীভূত হয়। এই সময় প্রচুর ঘাম ও মুখে লালচে ভাব দেখা দেয়, যা অনেক সময় কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। রাতে এমন হলে তাকে নাইট সুইটস (Night Sweats) বলা হয়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেনোপজের মধ্য দিয়ে যাওয়া নারীদের জন্য এটি একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। যারা হরমোন থেরাপি নিতে পারেন না বা নিতে চান না, তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ ও কার্যকর সমাধান।

২০২৩ সালে FDA আরও একটি ওষুধ ফেজোলিনেটান্ট (Fezolinetant) অনুমোদন দিয়েছিল, যা একইভাবে হরমোনবিহীন চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। উভয় ওষুধই মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশে কাজ করে, যেখানে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির কারণে স্নায়ুগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে গরম ভাব সৃষ্টি করে।

এই নতুন ওষুধগুলো স্নায়ুকোষে থাকা নির্দিষ্ট রিসেপ্টর বা “ডকিং স্টেশন”-এ রাসায়নিক সংকেত আটকায়, ফলে গরম ভাবের মাত্রা কমে আসে।

চিকিৎসক মহলের মতে, এই অনুমোদন মেনোপজের কারণে মাঝারি থেকে তীব্র হট ফ্ল্যাশে ভোগা নারীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা বিকল্প উন্মুক্ত করেছে, যা প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments