ন্যাটো জোটে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি স্পেনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় না বাড়ালে স্পেনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক শাস্তি হিসেবে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ১৪ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেন, “স্পেন একমাত্র দেশ যারা ৫ শতাংশ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। ন্যাটোর অন্য সব সদস্য দেশই তাদের ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। স্পেনের এই মনোভাব অসম্মানজনক।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই অবহেলার কারণে আমি তাদের ওপর বাণিজ্যিক শাস্তি আরোপের কথা ভাবছি। তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।”
গত সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, স্পেন যদি প্রতিরক্ষা খরচ বাড়াতে অস্বীকার করে, তবে দেশটিকে ন্যাটো থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তাঁর এই মন্তব্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অন্যদিকে, স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের দেশ ন্যাটোর একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং বর্তমানে প্রায় ৩,০০০ সেনা বিভিন্ন ন্যাটো অভিযানে নিয়োজিত আছেন। তিনি বলেন, “স্পেনের প্রতিশ্রুতি ও অবদান নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।”
৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছিলেন, ন্যাটোর সব দেশই প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করেছে, কেবল স্পেন ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, “তারা ভালো অবস্থানে আছে, তাই অজুহাতের সুযোগ নেই। হয়তো তাদের ন্যাটো থেকে বাদ দেওয়া উচিত।”
প্রতিক্রিয়ায় স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দেশটির অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করেন—স্পেন ন্যাটোর প্রতি তার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে।
এই ইস্যু নতুন নয়। আগেও প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, প্রতিরক্ষা খরচ না বাড়ালে স্পেন বাণিজ্যিক চাপের মুখে পড়বে। গত জুনে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে তিনি স্পেনকে “ফ্রি রাইড নিতে চাওয়া দেশ” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
সেই সম্মেলনে ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশের নেতারা প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্তে পৌঁছান, যা ২০১৪ সালের ওয়েলস সম্মেলনে নির্ধারিত ২ শতাংশের দ্বিগুণ। কিন্তু স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, তাঁদের দেশ এই লক্ষ্য থেকে নিজেদের অব্যাহতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা অন্য দেশগুলোর সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি, তবে আমাদের নিজস্ব কৌশল রয়েছে। ২.১ শতাংশ ব্যয়েই আমরা ন্যাটোর সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হবো।”
ন্যাটোর প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর স্পেনের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল জিডিপির মাত্র ১.৪৩ শতাংশ—যা পুরো জোটের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ অবস্থায় ন্যাটোর মহাসচিব এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ন্যাটো কোনো দেশকে ছাড় দিচ্ছে না, এখানে কোনো বিশেষ চুক্তি নেই। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব পথ থাকলেও প্রতিশ্রুতির দায় সবার।”
প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরেই ন্যাটোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সদস্য দেশের ব্যয় বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। ন্যাটোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত “Funding NATO” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নন-ইউএস সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান হলেও প্রতিরক্ষা ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও কম।
এই বৈষম্য বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান, বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে। প্রেসিডেন্টের প্রথম মেয়াদকালে বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে, এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তা নতুন করে গুরুত্ব পায়।
তখন তাঁর সহ–প্রার্থী বলেছিলেন, “আমরা চাই ন্যাটো শক্তিশালী থাকুক, তবে প্রতিটি দেশকে নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যাটোর অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ওপর এই ইস্যুর প্রভাব গভীর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।



