বিশ্বব্যাপী দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে একের পর এক স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তার মালিকানাধীন স্টারলিংক। বর্তমানে এই প্রকল্পের অধীনে মহাকাশে রয়েছে প্রায় আট হাজার স্যাটেলাইট। তবে এত বিপুল সংখ্যক স্যাটেলাইট এখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের জন্য এক ভয়ংকর সংকেত হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো নির্দিষ্ট সময় পার হলে অকেজো হয়ে কক্ষপথ থেকে নিচে নেমে আসে এবং বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, প্রতিদিন এক থেকে দুটি স্যাটেলাইট পুড়ে ধ্বংস হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ স্তরগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে ওজোনস্তরের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একজন খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানীর মতে, এখন প্রতিদিন অন্তত এক–দুটি স্যাটেলাইট কক্ষপথ থেকে নিচে নেমে আসছে। আগামী বছরগুলোতে যখন আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে, তখন এই হার আরও বাড়বে। বায়ুমণ্ডলের ক্ষতি হলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (ইউভি রে) সরাসরি পৃথিবীতে পৌঁছে মানবস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এতে ত্বকের ক্যানসার, চোখের ছানি ও অন্যান্য চক্ষু–সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
বর্তমানে পৃথিবীর চারপাশে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মহাকাশ–আবর্জনা ঘুরছে, যার মধ্যে আছে অকেজো স্যাটেলাইট, রকেটের ভাঙা অংশ এবং সংঘর্ষে উৎপন্ন ধাতব টুকরো। এই ‘স্পেস জাঙ্ক’ এখন মহাকাশের জন্যও বড় হুমকি। সাধারণত নিম্ন কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের আয়ু পাঁচ থেকে সাত বছর। আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা যদি ৩০ হাজারে পৌঁছায়, তাহলে প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ধ্বংস হবে। এতে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটবে এবং ক্ষয়প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।
একটি গবেষণা সংস্থার নেতৃত্বে পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্যাটেলাইট যখন বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যায়, তখন সেখান থেকে অ্যালুমিনিয়াম, তামা, লিথিয়ামসহ নানা ধাতব উপাদান মুক্ত হয়। এসব ধাতব কণিকা বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে। বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম যৌগ সূর্যের আলোতে ভেঙে ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করতে পারে, যা ওজোনস্তর ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে ভবিষ্যতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে। এর প্রভাব শুধু পরিবেশেই নয়, সরাসরি মানবজীবনেও পড়বে। তাই এখনই প্রয়োজন মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সুনির্দিষ্ট নীতি ও পুনর্ব্যবহারের উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। অন্যথায় স্টারলিংকের মতো প্রকল্পগুলো প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রতীক হলেও, পরিবেশের জন্য তা হতে পারে বিপর্যয়ের আরেক নাম।



