Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসস্টারবাকসের বারিস্তাদের নতুন ধর্মঘট: পুনরুদ্ধারের পথে বাধা?

স্টারবাকসের বারিস্তাদের নতুন ধর্মঘট: পুনরুদ্ধারের পথে বাধা?

বিখ্যাত কফি চেইন স্টারবাকস গ্রাহকদের ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে—দ্রুত সেবা, দোকানে সিরামিক কাপ ব্যবহার, হাতে লেখা শুভেচ্ছা নোট ইত্যাদি দিয়ে তারা আবারও কফি সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে চায়। বিক্রিও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে বছরের পর বছর ধরে চলা শ্রমিক অসন্তোষ তাদের অগ্রযাত্রায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে আবারও শুরু হয়েছে স্টারবাকসের বারিস্তাদের ধর্মঘট। ভালো বেতন, পর্যাপ্ত কর্মীসংখ্যা ও ন্যায্য শ্রমনীতি দাবি করে এই কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন ইউনিয়নে যুক্ত শত শত কর্মী। এই কর্মবিরতি অন্তত ২৫টি শহরের দোকানে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানা গেছে।

এটি গত চার বছরে কোম্পানির বিরুদ্ধে তৃতীয় বড় ধর্মঘট। ইউনিয়নের দাবি, নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর থেকে তাদের কাজের চাপ বেড়ে গেছে। এক মুখপাত্র বলেন, “প্রতিদিনের কাজ এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। কোম্পানি যেন কর্মীদের সীমার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে।”

তবে কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের ১০,০০০-এরও বেশি নিজস্ব দোকানের বেশিরভাগেই কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে। যদিও এই ধর্মঘটটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাদের জনপ্রিয় “রেড কাপ ডে” উপলক্ষে—যা কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিক্রির দিন। তাই এই সময়ে আন্দোলন স্টারবাকসের ভাবমূর্তিতে নতুন করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তা বয়কট, নতুন প্রতিযোগী, দাম বৃদ্ধির সমালোচনা এবং নেতৃত্বে পরিবর্তনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়েছে। নতুন প্রধান নির্বাহী দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হলেও বাস্তবে পরিবর্তন তেমন দ্রুত ঘটেনি।

কোম্পানি “ব্যাক টু স্টারবাকস” নামে একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে দোকানে অপ্রয়োজনীয় প্রবেশ সীমিত করা, কর্মীদের পোশাক নীতিমালা কঠোর করা এবং আরামদায়ক আসন ফিরিয়ে আনা। একইসাথে তারা ঘোষণা করেছে ৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা, যার উদ্দেশ্য দোকান ব্যবস্থাপনা ও কর্মী প্রশিক্ষণ উন্নত করা।

যদিও গত প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী বিক্রি মাত্র ১% বেড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি স্থিতিশীল থাকায় পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত। নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা অগ্রগতি করছি, কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি।”

অন্যদিকে, এই পুনর্গঠনের সাথে যুক্ত হয়েছে শত শত দোকান বন্ধ, হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই এবং চীনে তাদের ব্যবসার বড় অংশ বিক্রির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত। শ্রমিক ইউনিয়ন অভিযোগ করছে, চুক্তি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া শুরু হলেও মজুরি বৃদ্ধি, কর্মীসংখ্যা ও শ্রম অধিকারের বিষয়ে এখনো ঐক্যমত হয়নি।

ইউনিয়নের অভিযোগ, কোম্পানির প্রস্তাবিত বেতন বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি ও স্বাস্থ্য খরচের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কর্মীরা সেই চুক্তি বিপুলভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অপরদিকে, কোম্পানির দাবি—ইউনিয়নের চাহিদা বাস্তবসম্মত নয় এবং তা দোকানের কার্যক্রম ও গ্রাহক অভিজ্ঞতাকে ব্যাহত করবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্টারবাকসের মোট দোকানের মাত্র ৫% ইউনিয়নভুক্ত হলেও গত এক বছরে প্রায় ১০০টি নতুন দোকান ইউনিয়নে যুক্ত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অব্যাহত অচলাবস্থা ব্র্যান্ডটির কার্যক্রমের পাশাপাশি সুনামেও প্রভাব ফেলতে পারে।

এক ব্র্যান্ড বিশ্লেষক জানিয়েছেন, “গ্রাহক সন্তুষ্টি আসে কর্মী সন্তুষ্টি থেকে। কর্মীদের অসন্তোষ থাকলে ব্র্যান্ড শক্তি ধরে রাখা যায় না।” সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্টারবাকসের ব্র্যান্ড মান ২০২৫ সালে নেমে এসেছে গত নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

এই অবস্থায়, কোম্পানির ওপর রাজনৈতিক চাপও বাড়ছে। মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন সদস্য কোম্পানিকে ন্যায্যভাবে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান নেতৃত্বের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—পুনরুদ্ধারের পথে কর্মীদের আস্থা পুনরায় অর্জন করা। কারণ একটি বিষয় স্পষ্ট: সফলতা নির্ভর করছে কর্মীদের সন্তুষ্টির ওপরই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments