উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের কার্যকলাপে আরব দেশগুলো ক্রমেই হুমকি অনুভব করছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত বুধবার সৌদি আরব ও পাকিস্তান স্বাক্ষর করেছে কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি (এসএমডিএ)। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান এখন মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে যুক্ত হলো।
বিশ্লেষকদের মতে, এ চুক্তির ফলে রিয়াদের অর্থনৈতিক শক্তি এবং ইসলামাবাদের পারমাণবিক সামর্থ্যের একটি কৌশলগত মেলবন্ধন ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা দেবে, আর সৌদি আরব অর্থনৈতিক সহায়তায় এগিয়ে আসবে। যদিও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র শুধুমাত্র দীর্ঘদিনের বৈরী ভারতকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। তবুও রিয়াদ মনে করছে, এ চুক্তির মাধ্যমে তারা কার্যত এক ধরনের পারমাণবিক সুরক্ষার ছাতার নিচে এসেছে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র সম্ভাব্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ইসরায়েল এই চুক্তিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কোনো ধারা নেই, কেবল প্রচলিত সামরিক সহযোগিতাই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে সৌদি দিক থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও এই চুক্তির আওতায় আনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ইসরায়েল কখনো তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করেনি। তবে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, দেশটির এ ক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব স্পষ্ট জানিয়েছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করলে তারাও একই পথে হাঁটবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর নিরাপত্তার বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে। সৌদি আরব বলছে, মূল লক্ষ্য হলো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা। তবে পারমাণবিক অস্ত্রের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে তারা মন্তব্য করেনি।
পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। ছয় লাখের বেশি সেনা সদস্যসহ দেশটির সামরিক শক্তি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে এর আগে তিনটি বড় যুদ্ধ ও একাধিক সংঘাত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মতো সংঘাত আরও বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু সামরিক সহযোগিতাই নয়, বরং পাকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনার সুযোগ তৈরি করবে। সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ তারা দিয়েছে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ।
চুক্তিকে ঘিরে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এ ঘটনা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, এ চুক্তির আওতায় কোনো এক পক্ষের ওপর হামলা হলে তা উভয়ের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন মোড় এনে দিতে পারে। পাকিস্তানও এ সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক ও কৌশলগত উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। তবে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ—উভয়ই সমানভাবে বাড়ছে প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে।