কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রার প্রস্তুতিকালে একটি পর্যটকবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ‘এমভি আটলান্টিক ক্রুজ’ নামের ওই জাহাজে আগুন লাগার ফলে একজন কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেটিঘাটে অপেক্ষমাণ ১৯৪ জন পর্যটক।
শনিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে কক্সবাজার সদরের নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, কোস্টগার্ড এবং প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক দল আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আগুন ছড়িয়ে পড়লেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় তা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
জাহাজমালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এমভি আটলান্টিক ক্রুজ নিয়মিতভাবে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবহন করে থাকে। শনিবার সকালেও নির্ধারিত যাত্রার জন্য জাহাজটি জেটিঘাটে ভেড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক সেই সময় জাহাজের ভেতরে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন পুরো জাহাজে ছড়িয়ে পড়ে। এতে জাহাজটির বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জাহাজের একটি কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা এক কর্মচারীর পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। আগুন লাগার সময় জাহাজে আর কেউ ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তল্লাশি চালানো হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রার মাত্র ১৫ মিনিট আগে জাহাজটিতে আগুন ধরে। ওই সময় যদি যাত্রীরা জাহাজে উঠে পড়তেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত। তিনি বলেন, সময়ের ব্যবধানে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পর্যটকদের নিরাপত্তাই ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
জাহাজ পরিচালনা কমিটির এক দায়িত্বশীল সদস্য জানান, অগ্নিকাণ্ডে জাহাজটির প্রায় পুরো অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগুন লাগার সময় কোনো পর্যটক জাহাজে না থাকায় বড় বিপদ এড়ানো গেছে। ওই জাহাজে ভ্রমণের জন্য অপেক্ষমাণ পর্যটকদের বিকল্প জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জেটিঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একজন পর্যটক জানান, কয়েক দিন আগেই তিনি পরিবারসহ ওই জাহাজের টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন। জাহাজে ওঠার অপেক্ষায় থাকাকালে হঠাৎ আগুন লাগতে দেখে তিনি ও তার পরিবার ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সময়মতো ঘটনা ঘটায় সবাই বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
জানা গেছে, শনিবার সকাল ৭টায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে প্রায় দুই হাজার পর্যটক নিয়ে একাধিক জাহাজ সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে এসব জাহাজ বেলা দেড়টার দিকে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছানোর কথা। পরে বেলা তিনটার দিকে আগের দিন যাওয়া পর্যটকদের নিয়ে জাহাজগুলো কক্সবাজারে ফিরে আসে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও সীমিত পরিসরে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে যেতে পারছেন।
জাহাজমালিকদের সংগঠনের তথ্যমতে, শনিবার পাঁচটি জাহাজে মোট ১ হাজার ৯৯৩ জন যাত্রী সেন্ট মার্টিন গেছেন।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে জাহাজ চলাচল ও রাত যাপনের বিধিনিষেধের কারণে নভেম্বর মাসে কার্যত কোনো পর্যটক দ্বীপে যেতে পারেননি। পরে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিত পরিসরে রাত যাপনের অনুমতি দেওয়া হয়।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে এবং কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।



