Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসসুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক মামলা: ৯০ বিলিয়ন ডলারের ট্যারিফ রাজস্ব ও বাণিজ্য চুক্তির...

সুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক মামলা: ৯০ বিলিয়ন ডলারের ট্যারিফ রাজস্ব ও বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে শুরু হচ্ছে এক ঐতিহাসিক মামলা, যা দেশটির অর্থনৈতিক নীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। মামলাটি ঘিরে রয়েছে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের আরোপিত ট্যারিফ বা শুল্ক নীতিকে ঘিরে বিতর্ক, যা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কৌশলের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act – IEEPA) ব্যবহার করে বেশ কিছু দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এই আইনের মাধ্যমে তিনি ভারত, ব্রাজিলসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করেন, আর ২০২৫ সালের শুরুতে চীনের পণ্যে শুল্কের হার বাড়িয়ে দেন ১৪৫% পর্যন্ত।

এখন প্রশ্ন উঠেছে—তাঁর এই পদক্ষেপ আইনি সীমার মধ্যে ছিল কি না। আদালতের রায় যদি তাঁর বিপক্ষে যায়, তাহলে শুধু ট্যারিফ নীতি নয়, পুরো অর্থনৈতিক পরিকল্পনাই পুনর্গঠনের মুখে পড়তে পারে।

প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের ট্যারিফ রাজস্ব ঝুঁকিতে
মার্কিন কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা IEEPA-এর আওতায় আরোপিত শুল্ক বাবদ প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছেন। এটি ২০২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ট্যারিফ আয়ের অর্ধেকেরও বেশি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলেন, “যদি আদালত আমাদের বিপক্ষে রায় দেয়, তাহলে হয়তো সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে।” অর্থাৎ, ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই যে বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছেন, তা ফেরতের দাবি তুলতে পারেন।

তবে আইনজীবীরা সতর্ক করেছেন—রিফান্ড প্রক্রিয়া সহজ বা দ্রুত হবে না। এমনকি সব প্রতিষ্ঠানই এই ফেরতের আওতায় পড়বে, এমন নিশ্চয়তা নেই। যদি আদালত IEEPA-কে অবৈধ ঘোষণা করে, তাহলে প্রতিটি দাবির যোগ্যতা নির্ধারণেও আলাদা বিচার প্রক্রিয়া লাগবে।

বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
IEEPA-এর আওতায় হঠাৎ উচ্চ শুল্ক আরোপ করার ক্ষমতাই ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, যার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এসব চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি অংশীদাররা মার্কিন পণ্য কেনা বাড়াতে ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

কিন্তু যদি আদালত তাঁর বিপক্ষে রায় দেয়, তাহলে এসব চুক্তির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, “এই ট্যারিফগুলোর ভিত্তিতেই অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে এসেছে। এখন যদি সেই ভিত্তি নষ্ট হয়, তাহলে অনেক দেশ হয়তো পুনরায় আলোচনার দাবি তুলবে।”

এমন পরিস্থিতিতে কিছু দেশ পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর নিজস্ব শুল্ক আরোপ করতে পারে, যতক্ষণ না তাদের সীমান্ত কর হ্রাস করা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।

ট্যারিফ নীতিতে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের কাছে ট্যারিফ আরোপের একাধিক আইনগত উপায় থাকলেও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মূলত দুটি আইনের ওপর নির্ভর করেছিলেন — IEEPA এবং সেকশন ২৩২। সেকশন ২৩২ অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট শিল্পক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো যায়, তবে এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হয়।

২০২৫ সালে তিনি এই আইনের আওতায় গাড়ি, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েছেন। একইসঙ্গে আরও কয়েকটি পণ্যের ওপর তদন্ত চলছে, যার ফলাফল ভবিষ্যতে নতুন শুল্ক আরোপে প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে যেভাবে IEEPA তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছিল, সেই ক্ষমতা অন্য কোনো আইনে নেই। তাই আদালতের রায় যদি তাঁর বিপক্ষে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেই সুবিধাটি তিনি হারাবেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মামলার রায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কৌশলে নতুন দিক নির্ধারণ করবে। এটি শুধু ট্যারিফ নয়, বরং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্যেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments