মাথায় গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ককে উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার দুপুরে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। একটি বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে স্থানান্তরের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ ও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিদেশযাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচিত এই নেতাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ইতোমধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। তাঁর সঙ্গে সিঙ্গাপুর যাবেন পরিবারের দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য, যাঁরা তাঁর আপন দুই ভাই। এই দুজনই পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় তাঁর পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে দুই ভাই তাঁর সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্য কেউ এই সফরে যুক্ত হবেন কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানান। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, রোগীকে হাসপাতাল থেকে সড়কপথে একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় মেডিকেল প্রটোকল অনুসরণ করে তাঁকে সরাসরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। দুপুরের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত জটিলতা তৈরি না হয়।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে একটি জরুরি টেলিফোন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই আলোচনায় সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী, এভারকেয়ার হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং আহত নেতার পরিবারের একজন সদস্য অংশ নেন। সেখানেই তাঁকে দ্রুত সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রেস উইং জানায়, গত দুই দিন ধরে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়। বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা সুবিধা, বিশেষজ্ঞ মতামত ও সম্ভাব্য চিকিৎসা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হয়। পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের সুপারিশ এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সিদ্ধান্তই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, তাঁর চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আহত নেতার দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চাওয়া হয়েছে, যাতে তিনি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁর অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। আজ দুপুরে সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর পরবর্তী চিকিৎসা শুরু হবে বলে জানা গেছে।



