লিভারপুলের জার্সি গায়ে অসংখ্য রেকর্ডের জন্ম দেওয়া ক্লাবের অন্যতম সফল ফরোয়ার্ডকে ঘিরে এখন সৃষ্টি হয়েছে অভূতপূর্ব অস্থিরতা। দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্কের এই অধ্যায় যে এমন মোড়ে এসে দাঁড়াবে, তা হয়তো কল্পনাতেও ছিল না ক্লাবের এই তারকার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজের অবদান দিয়ে ‘মিসরীয় রাজা’ হিসেবে পরিচিত এই ফুটবলার হঠাৎ করেই যেন হয়ে উঠেছেন সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু, আর তার সঙ্গে ক্লাবের সম্পর্কটিও চলে গেছে টানাপোড়েনের কঠিন এক সীমানায়।
সাম্প্রতিক মৌসুমে লিগ শিরোপা জয়ের নায়ক ছিলেন এই ফরোয়ার্ড, কিন্তু চলতি মৌসুম যেন তার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র এঁকে দিয়েছে। ১৯ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল করা একসময়ের ভয়ঙ্কর এই উইঙ্গার ইতোমধ্যে লিভারপুলের তিনটি লিগ ম্যাচে একাদশের বাইরে ছিলেন। এর মধ্যে একটি ম্যাচে বদলি হিসেবে সুযোগ পেলেও বাকি দুটিতে ছিলেন শুধু দর্শক। টানা তিন ম্যাচে উপেক্ষিত হওয়া সহজভাবে নিতে পারেননি তিনি। ৬ ডিসেম্বর লিডস ইউনাইটেডের সঙ্গে ৩-৩ ব্যবধানে ড্রয়ের পর বিস্ফোরক মন্তব্য করেন এই ফরোয়ার্ড।
তিনি অভিযোগ তোলেন যে দলে তাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে এবং সব দোষ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে তার সঙ্গে ক্লাবের প্রধান কোচের সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় নানামুখী প্রতিক্রিয়া। সাবেক ইংলিশ তারকা রুনি প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন, পাশাপাশি লিভারপুলের গোলরক্ষকও মন্তব্য করেন যে সতীর্থের এমন আচরণ ক্লাবের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার রাতে ঘোষণা করা হয় লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্কোয়াড, যেখানে জায়গা হয়নি এই ফরোয়ার্ডের। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে আজ রাতের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাকে বাইরে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ক্লাব কর্তৃক। কোচের বক্তব্য, দলের সেরা প্রস্তুতি নিশ্চিত করতেই তাকে স্কোয়াডের বাইরে রাখা হয়েছে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
প্রাক ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে কোচ বলেন যে তার মন্তব্য তাকে বিব্রত করেছে, যদিও তিনি এ কথাও উল্লেখ করেন যে একজন খেলোয়াড়ের জন্য ফিরে আসার দরজা সবসময় খোলা থাকে। তিনি জানান যে ফরোয়ার্ডের মন্তব্য নিয়ে ক্লাব তীব্র অসন্তুষ্ট, তবে এ বিষয়ে অনুমান করা ঠিক হবে না যে তিনি কার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। কোচ আরও জানান যে সান সিরোয় ভ্রমণ না করার বিষয়টি তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এটাই ছিল তাদের শেষ কথোপকথন।
সতীর্থ গোলরক্ষক বলেন যে মন্তব্যটি তাকে বিস্মিত করেছে, তবে খেলোয়াড় হিসেবে যে কেউ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। তিনি একই সঙ্গে যোগ করেন যে এমন আচরণের দায় খেলোয়াড়কেই নিতে হবে। তার মন্তব্য ছিল যে ফুটবলে এসব নিয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই, কারণ দলের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অপেক্ষা করছে। যদিও তিনি এখনো তার সঙ্গে কথা বলেননি, তবু তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির সমাধান হবে।
ইএসপিএন সূত্রে জানা গেছে যে কোচের সঙ্গে আলোচনা করেই ক্লাব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সাময়িকভাবে স্কোয়াডের বাইরে রাখতে। মন্তব্যের ধরন ও সময় বিবেচনায় নিয়ে ক্লাব মনে করছে যে তাকে কিছু দিন দূরে রাখা সবার জন্যই ভালো। যদিও শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার সিদ্ধান্তই তারা বজায় রেখেছে।
এই ঘটনার পর এখন বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই যে, তিনি আদৌ লিভারপুলের হয়ে আর মাঠে নামবেন কি না। ক্লাব কোচ পরিষ্কার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনই কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। ক্লাবের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নায়ক এই ফুটবলারের ভবিষ্যৎ তাই ঝুলে আছে গভীর অনিশ্চয়তায়।



